ঢাকা, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯ আশ্বিন ১৪৩২

Zakaria Islam

Senior Reporter

মুডিসের অশনিসংকেত: খেলাপি ঋণ নবায়নে ব্যাংক খাত ঝুঁকিতে!

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ১৫:৫৩:২০
মুডিসের অশনিসংকেত: খেলাপি ঋণ নবায়নে ব্যাংক খাত ঝুঁকিতে!

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস সম্প্রতি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে এক গুরুতর সতর্কবার্তা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক খেলাপি ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে দেওয়া নতুন ছাড়কে সংস্থাটি 'ক্রেডিট নেগেটিভ' বা 'ঋণের জন্য নেতিবাচক' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মুডিসের সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যা দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

মুডিস তার বিশ্লেষণে জানিয়েছে যে, যদিও এই নীতি সাময়িকভাবে ব্যাংকগুলোর ওপরকার বোঝা কমাতে পারে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। সংস্থাটির মতে, এটি শুধু ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকেই ব্যাহত করবে না, বরং খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিকে আরও স্থায়ী করে তুলবে।

নতুন ছাড়ের বিস্তারিত এবং মুডিসের আপত্তি:

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়। এই সুবিধা অনুযায়ী, মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়ে ১০ বছর মেয়াদে ঋণ নবায়ন করা যাবে এবং এতে দুবছরের গ্রেস পিরিয়ডও থাকবে। এছাড়া, খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে আদালতে কোনো মামলা থাকলে, নবায়নের পর তা স্থগিত করতে হবে।

মুডিস এই সুবিধার বিভিন্ন দিক নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে:

ঋণ পরিশোধ সক্ষমতার অভাব: গ্রেস পিরিয়ডের কারণে ঋণগ্রহীতার প্রকৃত পরিশোধ সক্ষমতা যাচাই করা কঠিন হবে। নিয়মিত পরিশোধের ধারা না থাকায়, দুই বছর পর গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কিনা, তা অনিশ্চিত থাকবে।

কৃত্রিম চিত্রায়ন: এই বিশেষ ছাড়ের ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত হার কৃত্রিমভাবে কম দেখানো হতে পারে, যা ব্যাংক খাতের প্রকৃত স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা দেবে।

ঋণ আদায় প্রক্রিয়ায় বাধা: নবায়নের ৯০ দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের বিধান ঋণ আদায় কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। গ্রাহক পুনরায় খেলাপি হলে ব্যাংকের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

ঝুঁকিপূর্ণ ডাউন পেমেন্ট: মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণ নবায়নের প্রক্রিয়াকে মুডিস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে।

অনাদায়ী ঋণের সংস্কৃতি ও ব্যাংক খাতের দুর্বলতা:

মুডিস জোর দিয়ে বলেছে যে, খেলাপি ঋণ নবায়নে বারবার শিথিলতা আনলে প্রকৃত আদায় না হয়ে অনাদায়ী ঋণের সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হবে। পর্যাপ্ত তদারকি ছাড়া এমন ছাড় জামানতবিহীন ঋণকে কাগজে-কলমে সচল দেখালেও ব্যাংকগুলোর অন্তর্নিহিত ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। এর আগে ২০২২ সালে একই ধরনের ছাড় দিয়েও ব্যাংক খাত কোনো ইতিবাচক ফল পায়নি, যা এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান ভঙ্গুর চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৪ সালে মোট বিতরণ করা ঋণের ১১.১ শতাংশ ছিল অনাদায়ী, যা ২০২৫ সালের মার্চে বেড়ে ২৪.১ শতাংশে পৌঁছেছে। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন ৩.১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আন্তর্জাতিক মান (কমপক্ষে ১০ শতাংশ) থেকে অনেক নিচে।

তবে, মুডিস ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংকের মতো কয়েকটি ব্যাংকের তুলনামূলক স্থিতিশীল অবস্থার কথা উল্লেখ করেছে।

মুডিসের এই সতর্কবার্তা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় আরও কঠোরতা এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের প্রয়োজন। অন্যথায়, দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ