ঢাকা, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

১০ দিনে পেঁয়াজের বাজার দ্বিগুণ: দাম বাড়ার আসল কারণ ফাঁস

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৭ ১৪:০৮:০৮
১০ দিনে পেঁয়াজের বাজার দ্বিগুণ: দাম বাড়ার আসল কারণ ফাঁস

মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পেঁয়াজের খুচরা মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে তীব্র বাজার অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বগতি সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে উদ্বেগ ও প্রশ্ন তৈরি করেছে। (তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা)

বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি ও বাজারের চিত্র

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার দেশি পেঁয়াজের বিক্রয় মূল্য মানভেদে প্রতি কেজিতে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা ছুঁয়েছে। একই সময়ে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়েছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের খুচরা বিক্রেতাদের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দর প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজধানীর গুদারাঘাট কাঁচা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রিপন মিয়া মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরাসরি পাইকারি বাজারকেই দায়ী করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বুধবার যেখানে ১০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন, সেখানে পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হওয়ায় আজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতির কারণ: সরবরাহ ঘাটতি না নীতিগত সিদ্ধান্ত?

পেঁয়াজের বাজারের এই আকস্মিক উত্তেজনার প্রধান কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা দু’টি বিষয়কে সামনে আনছেন:

১. দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে যোগান কমে যাওয়া।২. দীর্ঘদিন ধরে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) স্থগিত থাকা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা এবং পেঁয়াজ আমদানিকারক আহসান উল্লাহ জাহেদী নিশ্চিত করেছেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহের একটি বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই যোগান ঘাটতির সুযোগ নিয়ে একদিনের ব্যবধানে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়াচ্ছেন।

ক্যাবের অভিযোগ: ‘কৃত্রিম সংকট তৈরি’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) অবশ্য মূল্যবৃদ্ধির এই ধারাকে অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটি মনে করছে, বাজারে বিদ্যমান মজুত দিয়ে নতুন ফসল আসা পর্যন্ত সহজেই চাহিদা মেটানো সম্ভব।

ক্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, কিছু ব্যবসায়ী আমদানি অনুমতি জোরদার করার লক্ষ্যে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। তাদের মতে, শিগগিরই দেশি পেঁয়াজের নতুন ফসল বাজারে আসবে। ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন সরকারের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বার্ষিক ২৫-২৭ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে ২১ লাখ টন উৎপাদন হয়, নাজের হোসেনের দাবি, বাজার তদারকিতে দুর্বলতাই এই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ।

ভবিষ্যৎ মূল্য এবং আমদানির ফ্লেক্সিবল নীতির দাবি

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা গত ১০ দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু বর্তমানে আমদানি বন্ধ, তাই নতুন ফসল মাঠে না আসা পর্যন্ত কিছুটা উচ্চমূল্যের প্রবণতা বজায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। নতুন পেঁয়াজ উৎপাদনে কিছুটা দেরির কারণে ফসল ঘরে তুলতেও কৃষকদের আরও কিছুটা সময় লাগবে।

তবে আমদানিকারকরা সতর্ক করে বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানি চালু না হলে আগামী দিনে দাম আরও বাড়বে। আমদানিকারক জাহেদী জোর দিয়ে বলেন, সরকার আজ আইপি খুলে দিলেই কাল বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।

অন্যদিকে, ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বাজার তদারকি বৃদ্ধি করে কৃত্রিম সংকট তৈরির সুযোগ বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আমদানি নীতিতে নমনীয়তা আনার পক্ষে মত দিয়েছেন। তার মতে, দেশীয় ফলন বেশি থাকলে আমদানি নিরুৎসাহিত করা এবং ঘাটতি থাকলে আমদানির সুযোগ দেওয়া—এমন একটি স্থিতিস্থাপক নীতি থাকা সরকারের জন্য আবশ্যক।

নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের হঠাৎ দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ