
Alamin Islam
Senior Reporter
ভূমি মালিকদের জরুরি সতর্কতা: নামজারি না থাকায় ৪ বিপদ

আপনার পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া জমির মালিকানা কি এখনো রেকর্ডভুক্ত হয়নি? যদি তা না হয়ে থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে আপনাকে মারাত্মক আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হতে পারে। সরকারের সাম্প্রতিক পরিপত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির নামজারি (মিউটেশন) দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এর অভাবে কী কী বিপদ আসতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভূমি মালিকদের জন্য এই ৪টি অপরিহার্য পদক্ষেপ এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
১. দেওয়ানি মামলার ঝুঁকি হ্রাস ও দ্রুত নিষ্পত্তির গুরুত্ব:
বর্তমানে দেশে দেওয়ানি মামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা বিচার ব্যবস্থার ওপর énorme চাপ সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রতিটি জেলা আদালত এবং সহকারী জজদের দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে। একইসাথে, নতুন মামলা সৃষ্টি বন্ধ করতে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত করতে নামজারি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আপনার জমির নামজারি না থাকলে মালিকানা নিয়ে ভবিষ্যতে বিবাদ দেখা দিতে পারে, যা আপনাকে দেওয়ানি মামলার জালে জড়াতে পারে। এই ধরনের আইনি জটিলতা এমনকি জেলহাজত পর্যন্ত গড়াতে পারে, তাই দ্রুত নামজারি সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. নামজারি ছাড়া জমি কেনা-বেচা বা বন্ধক অসম্ভব:
উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকানা পেলেও যদি আপনার নামে নামজারি না থাকে, তবে সেই জমি আপনি বিক্রি করতে পারবেন না। কেবল ওয়ারিশ সনদ থাকলেই যথেষ্ট নয়; নামজারির জন্য অবশ্যই একটি বণ্টননামা বা বাটোয়ারা দলিল থাকা আবশ্যক। যদি কখনও আর্থিক প্রয়োজনে আপনাকে জমি বিক্রি বা বন্ধক রাখতে হয়, নামজারি না থাকার কারণে আপনি ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এটি শুধু আপনার সম্পত্তির আইনি বৈধতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে না, বরং আপনার মালিকানার ওপর নিয়ন্ত্রণকেও সীমিত করবে।
৩. এওয়াজ (হস্তান্তর) ও দখল সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা:
নামজারি না থাকলে ওয়ারিশরা তাদের প্রাপ্ত অংশ আইনগতভাবে অন্য কাউকে হস্তান্তর বা এওয়াজ করতে পারবেন না। জমির দখল হস্তান্তর বা অংশীদারদের মধ্যে নিজেদের শেয়ার আদান-প্রদানও আইনগতভাবে বন্ধ থাকবে। এর ফলস্বরূপ, জমির কার্যকর ব্যবহার ব্যাহত হবে এবং একটি ক্ষতিকর অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে, যা সম্পত্তির সামগ্রিক উন্নয়ন ও ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করবে।
৪. স্থায়ী অধিকার হারানোর ভয় ও ভবিষ্যৎ দাবির দুর্বলতা:
যদি আপনার ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমিটি দীর্ঘদিন ধরে বিভাগ করে ভোগদখল করা হয়ে থাকে, কিন্তু রেকর্ডে আপনার নাম না থাকে, তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য সহ-ওয়ারিশরা আপনার দাবিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলে সহ-ওয়ারিশদের দাবি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং আপনি আইনগতভাবে আপনার অধিকার রক্ষা করতে পারবেন না। এর মানে হলো, আপনার ভোগদখলকৃত সম্পত্তির উপর আপনার অধিকার দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আপনি আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন।
ডিজিটাল জরিপ: নতুন ব্যবস্থা ও সময়সীমা:
বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (BDS) কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। লক্ষ্য হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলায় এই ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করা। নতুন আইন অনুযায়ী, অনলাইনে পরিচালিত এই জরিপের ভিত্তিতেই খতিয়ান ও মালিকানা চূড়ান্ত করা হবে। এর ফলে, ডিজিটাল রেকর্ডে যাদের নাম থাকবে না, ভবিষ্যতে তাদের জমি আইনগতভাবে স্বীকৃত হবে না।
সরকারি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে, ডিজিটাল জরিপে শুধুমাত্র বৈধ ও সঠিক দলিলের মালিকরাই রেকর্ডভুক্ত হবেন। দুর্নীতি বা প্রভাবশালীদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে, যদি পূর্বের কোনো রেকর্ডে ভুল (যেমন: আরএএস রেকর্ডে ত্রুটি বা দলিলে ত্রুটি) থাকে, তবে তা সহজে সংশোধন করা যাবে না। সেক্ষেত্রে আইনি সমাধান বা মামলা নিষ্পত্তির প্রয়োজন হবে।
সরকারের নির্দেশনা ও সহজ পদ্ধতি:
পরিপত্রে বলা হয়েছে যে, যারা এখনও নামজারি করেননি, তারা সরকার কর্তৃক নির্দেশিত সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন। যদি একাধিক ওয়ারিশ সম্মিলিতভাবে নামজারি করতে চান, তবে তারা যৌতুকের ভিত্তিতে সম্মতি জানিয়ে নামজারি করতে পারবেন। তবে, যদি কেউ তার নিজের অংশ আলাদাভাবে নামজারি করতে চান, তবে তার জন্য বণ্টননামা বা বাটোয়ারা দলিল থাকা বাধ্যতামূলক।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
ভূমি আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, নামজারি, বণ্টন দলিল এবং সঠিক কাগজপত্র না থাকলে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের লেনদেন, বিনিয়োগ, বিক্রয় বা ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। তারা নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি দিচ্ছেন:
যত দ্রুত সম্ভব বণ্টননামা বা বাটোয়ারা দলিল সম্পন্ন করে নামজারি করুন।
আপনার স্থানীয় ভূমি অফিস বা তহসিলদার অফিসে গিয়ে খতিয়ান-দলিল যাচাই করুন।
প্রয়োজনে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে ওয়ারিশান সনদ এবং বণ্টন দলিল প্রস্তুত করুন।
সরকারি নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, যেসব জমির নামজারি নেই বা বণ্টন দলিল অনুপস্থিত, ভবিষ্যতে সেগুলোর ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলা, বিক্রয়-বন্ধন, এওয়াজ-হস্তান্তর সহ অসংখ্য জটিলতা দেখা দেবে। তাই, ওয়ারিশদের জন্য এটি এখন একটি ‘অতি জরুরি’ বিষয়। আপনার উত্তরাধিকার সম্পত্তির নামজারি বা বণ্টন দলিল সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য অবিলম্বে আপনার নিকটস্থ ভূমি অফিস বা একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আপনাকে বিরাট আর্থিক ও আইনি সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে।
আব্দুর রহিম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান: টস শেষ, একাদশ ৩ পরিবর্তন, লাইভ দেখুন এখানে
- চলছে ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ: লাইভ দেখুন এখানে
- চলছে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ম্যাচ: ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, লাইভ দেখুন এখানে
- কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ম্যাচ: লাইভ দেখুন এখানে
- কিছুক্ষণ পর ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ: লাইভ দেখুন এখানে
- আজ বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ম্যাচ: লাইভ দেখার সহজ উপায় ও সময়সূচি
- আজ বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ম্যাচ: কখন, কোথায়, কিভাবে দেখবেন লাইভ
- বাংলাদেশ বনাম ভারত: টস শেষ, একাদশে ৪ পরিবর্তন, লাইভ দেখুন এখানে
- চলছে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ম্যাচ: ২ উইকেট হারালো পাকিস্তান, লাইভ দেখুন এখানে
- আজ বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচ: লাইভ দেখার সহজ উপায়
- এক শেয়ারের ২৩,০০০% উত্থান-পতন! কারা দায়ী?
- ২৬ লাখ শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা: বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ?
- 'জেড' ক্যাটাগরি থেকে 'এ' ক্যাটাগরিতে উন্নীত এক কোম্পানির শেয়ার
- শেয়ারবাজারে ভয়ংকর প্রতারণা: অন্ধকারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ঝুঁকিতে বিনিয়োগকারীরা
- চলছে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ম্যাচ: লাইভ দেখুন এখানে