ঢাকা, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

বিএসইসি’র বিতর্কিত নীতিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে শেয়ারবাজার

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১৬:১০:১৬
বিএসইসি’র বিতর্কিত নীতিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে শেয়ারবাজার

দেশের পুঁজিবাজারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে—সরাসরি এমন গুরুতর অভিযোগ করেছেন লগ্নিকারীরা। এই পরিকল্পনার জন্য তাঁরা আঙুল তুলেছেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর দিকে। বিনিয়োগকারীদের দাবি, লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ডের মরসুমেও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় টানা দরপতন চলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বদলে একের পর এক পুঁজি সুরক্ষার পরিপন্থী ও বিতর্কিত নির্দেশ জারি করছে।

স্থিতিশীলতা থেকে বিপর্যয়ের পথে যাত্রা

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরের গোড়ার দিকেই বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা একটি সুদৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে যায়। এ সময়ে সূচক এবং লেনদেনের পরিমাণ প্রত্যাশা মাফিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণও বেড়েছিল। তবে সেপ্টেম্বরে এনবিআর-এর বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত পত্র প্রকাশের ফলে বাজারে প্রথম ধাক্কা লাগে।

ওই বিপর্যয় কাটিয়ে বাজার পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করলেও বিএসইসি’র পরবর্তী বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি করেছে। লগ্নিকারীরা মনে করছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বশেষ মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত ইস্যুটি বাজারের জন্য আরও মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রতি বিএসইসি’র উদাসীনতা

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালায় ক্ষুদ্র পুঁজির লগ্নিকারীদের, বিশেষত যাদের বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার নিচে, তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়েছে। তাদের মতে, বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে সকল শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেদিকে নিস্পৃহ এবং তারা বাজারকে ধ্বংস করার মতো প্রতিটি নীতি প্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্বৈরতান্ত্রিক চক্রের সহযোগী আখ্যা এবং রাজপথে নামার আল্টিমেটাম

বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের সহযোগী হওয়ার মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, বাজারের প্রতি লগ্নিকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যেই একের পর এক বিনিয়োগকারীদের প্রতিকূলে নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে।

তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো থেকে সরে না আসে, তবে বিনিয়োগকারীরা বৃহত্তর প্রতিবাদ এবং কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। পুঁজিবাজারকে এই ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে বিএসইসি-তে কর্মরত ক্ষমতাসিন চক্রের সকল অনুচরদের অবিলম্বে অপসারণ করা জরুরি বলেও দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

৯ নভেম্বরের বাজার চিত্র: ডিএসইতে লেনদেন সঙ্কুচিত, সূচকের ব্যাপক পতন

নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের এমন ক্ষোভের আবহের মধ্যেই আজ (০৯ নভেম্বর) দেশের প্রধান দুই স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের পতন ঘটেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)

আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৮.০১ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ৪ হাজার ৮৯৯.৯২ পয়েন্টে স্থির হয়েছে। এদিন অন্য দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৬.৬০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২.৬০ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১১.৮১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯২৮.৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করেছে।

ডিএসইতে আজ মোট ৩৯০টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ৩৪টির দর বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে ৩২৯টির দর কমেছে এবং ২৭টির দর অপরিবর্তিত ছিল, যা বাজারের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।

লেনদেনের পরিমাণ:

ডিএসইতে এদিন মোট ৪০২ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। যা আগের দিনের ৪১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার লেনদেনের চেয়ে ১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কম, অর্থাৎ লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)

অপরদিকে, চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ২২ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার তুলনায় বেশি।

সিএসইতে মোট ১৫৫টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেনে অংশ নেওয়ার মধ্যে ৩৬টির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে, ১১৪টির দর কমেছে এবং ৫টির দর পরিবর্তন হয়নি। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮৬.০৬ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৯৫৮.৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

FAQ (Frequently Asked Questions) এবং উত্তর

প্রশ্ন ১: বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার ধ্বংসের জন্য সরাসরি কাকে দায়ী করছেন?

উত্তর: বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছেন এবং ধ্বংসের পাঁয়তারার অভিযোগ করছেন।

প্রশ্ন ২: বিএসইসি-এর কোন সর্বশেষ নির্দেশনায় বাজারে মারাত্মক বিপর্যয় এসেছে বলে অভিযোগ?

উত্তর: বিএসইসি-এর সর্বশেষ মার্জিন ঋণের ইস্যুটি বাজারের জন্য আরও মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে এনেছে বলে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন।

প্রশ্ন ৩: মার্জিন ঋণ ইস্যুতে কোন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে?

উত্তর: বিনিয়োগকারীদের মতে, মার্জিন ঋণ ইস্যুতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, বিশেষ করে ৫ লাখ টাকার নিচে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: ০৯ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কত পয়েন্ট কমেছে?

উত্তর: ০৯ নভেম্বর (রোববার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৮.০১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৯৯.৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্ন ৫: নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে বিনিয়োগকারীরা কী পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন?

উত্তর: নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে বিনিয়োগকারীরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আমিনুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ