ঢাকা, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২

বিডিএস জরিপ: আপনার জমির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত? যা জানা দরকার! 

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ২০:৫৩:৩৫
বিডিএস জরিপ: আপনার জমির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত? যা জানা দরকার! 

বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে বা বিডিএস (BDS) জরিপ। ভূমি সংস্কার বোর্ড এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই মেগা প্রকল্পটি দেশের সকল জমির সঠিক ও আধুনিক ডিজিটাল রেকর্ড তৈরির লক্ষ্যে শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটাই – ভূমির মালিকানা নিয়ে প্রচলিত সকল জটিলতা দূর করে একটি স্বচ্ছ এবং আধুনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় এই জরিপ কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

বিডিএস জরিপ কী এবং এর গুরুত্ব কেন?

বিডিএস জরিপ হলো একটি আধুনিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে জমির মালিকানা, সীমানা এবং খতিয়ান সংক্রান্ত সকল তথ্য নির্ভুলভাবে ডিজিটাল ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। এটি প্রচলিত সিএস, এসএ, আরএস বা বিএস-এর মতো পুরনো রেকর্ডগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বশেষ মানচিত্র ও খতিয়ান প্রস্তুত করছে। এর প্রধান গুরুত্ব হলো:

ভুল ও বিতর্ক নিরসন: পুরনো রেকর্ডের অসামঞ্জস্যতা এবং সীমানা সংক্রান্ত ভুলত্রুটি দূর করে একটি নির্ভুল ও আপ-টু-ডেট ডেটাবেজ তৈরি করা।

স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: ভূমি সংক্রান্ত সকল তথ্যে স্বচ্ছতা এনে মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করা।

সহজ প্রবেশাধিকার: ভূমি মালিকদের জন্য তাদের জমির তথ্য সহজে পাওয়ার সুযোগ তৈরি করা।

কীভাবে এই জরিপ পরিচালিত হচ্ছে?

বিডিএস জরিপ কার্যক্রম অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে:

উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার: জিপিএস (Global Positioning System) এবং টোটাল স্টেশন মেশিন (Total Station Machine)-এর মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমির সূক্ষ্ম পরিমাপ করা হচ্ছে। এর ফলে সীমানা নির্ধারণে ভুলের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

প্লটভিত্তিক শনাক্তকরণ: প্রতিটি প্লট বা দাগ নম্বর নতুন করে চিহ্নিত ও রেকর্ড করা হচ্ছে, যা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও সুসংগঠিত করবে।

ডিজিটাল ও অনলাইন সংরক্ষণ: জমির মালিকানা যাচাই-বাছাইয়ের পর খতিয়ান তৈরি করে তা অনলাইনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এটি ভূমি মালিকদের জন্য তথ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে।

প্রমাণস্বরূপ খসড়া খতিয়ান: জরিপ কার্যক্রমে প্রাথমিক পর্যায়ে খসড়া খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়, যা মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাই ও সংশোধনের সুযোগ তৈরি করে।

ভূমি মালিকদের জন্য এই জরিপের সুবিধা:

বিডিএস জরিপ ভূমি মালিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী এবং বহুমুখী সুবিধা নিয়ে আসবে:

বিরোধ নিষ্পত্তি ও দখল রোধ: জমির রেকর্ডে স্বচ্ছতা আসায় দখল সংক্রান্ত বা মাপজোক নিয়ে বিরোধ অনেকাংশে কমে আসবে।

অনলাইন সেবা: ভূমি মালিকরা তাদের জমির খতিয়ান অনলাইনে দেখতে ও ডাউনলোড করতে পারবেন, যা সময় ও শ্রম উভয়ই বাঁচাবে।

ভূমি সেবা সহজীকরণ: জমির দলিল, নামজারি (মিউটেশন) এবং অন্যান্য ভূমি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ, দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত হবে।

বর্তমানে জরিপের অবস্থা:

বিডিএস জরিপ দেশজুড়ে একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেক জেলা ও উপজেলায় মাঠপর্যায়ে পরিমাপ ও তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য স্থানেও কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে।

ভূমি মালিকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা:

এই গুরুত্বপূর্ণ জরিপ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে এবং কোনো ভুল তথ্য রেকর্ড হওয়া থেকে রক্ষা পেতে ভূমি মালিকদের কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা আবশ্যক:

সরকারি নোটিশে নজর রাখুন: আপনার এলাকায় যখন জরিপ কার্যক্রম শুরু হবে, তখন স্থানীয় প্রশাসনের নোটিশ এবং সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনোযোগ দিন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন: আপনার জমির পুরনো খতিয়ান, দলিল, এবং ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের রশিদ সর্বদা প্রস্তুত রাখুন। জরিপ কর্মীদের এগুলো দেখাতে হতে পারে।

মাঠকর্মীদের সহযোগিতা করুন: জরিপ কার্যক্রমে নিয়োজিত মাঠকর্মীদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন, যাতে আপনার জমির নির্ভুল তথ্য রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। কোনো ভুল নজরে এলে দ্রুত জানান।

আপনার সীমানা সম্পর্কে অবগত থাকুন: নিজের জমির সীমানা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন এবং জরিপকালে উপস্থিত থাকুন।

বিডিএস জরিপ বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে একটি নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে। ভূমি বিষয়ক দীর্ঘদিনের জটিলতা ও বিরোধ কমাতে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাই, সকল ভূমি মালিকের উচিত এই জরিপ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে একটি আধুনিক, স্বচ্ছ এবং ঝামেলামুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ