ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

জমির নামজারি এখন অনলাইনে: ঘরে বসেই করুন জমির নামজারি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১০:১৯:৪১
জমির নামজারি এখন অনলাইনে: ঘরে বসেই করুন জমির নামজারি

জমির নামজারি এখন আরও সহজ: নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে মিলছে স্বস্তি

জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতা অবসানে এবং ভূমি সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। চালু হয়েছে আধুনিক ও ব্যবহারকারী-বান্ধব অনলাইন নামজারি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই মাত্র তিনটি সরল ধাপে জমির নামজারি, মিউটেশন ও খাজনা খারিজ সম্পন্ন করা যাবে। মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পরিপত্র অনুযায়ী, এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা গ্রহণে এখন আর দালালদের দৌরাত্ম্য বা সরকারি দপ্তরে বারবার ছোটাছুটি করার প্রয়োজন নেই।

নামজারি কী এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম কেন?

নামজারি হলো একটি আইনি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জমির মালিকানা পূর্বতন মালিকের কাছ থেকে নতুন মালিকের নামে সরকারি রেকর্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা হলে ভবিষ্যতে জমি নিয়ে বিরোধ, জালিয়াতি বা আইনি জটিলতার শিকার হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে। সুতরাং, নিরবচ্ছিন্ন ও সুরক্ষিত মালিকানা নিশ্চিত করতে নামজারির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

তিনটি সরল পদ্ধতিতে অনলাইন নামজারি প্রক্রিয়া:

ভূমি মন্ত্রণালয় নামজারির প্রক্রিয়াকে জনমুখী করতে তিনটি ভিন্ন পদ্ধতি চালু করেছে, যা নাগরিকদের জন্য অভূতপূর্ব সুবিধা নিয়ে এসেছে:

১. জমা ভাগ না করেই নামজারি (যৌথ মালিকানা):

যদি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমিতে ওয়ারিশদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক আপোষ বণ্টন না হয়ে থাকে, তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত ওয়ারিশ কায়েম সনদ, জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনলাইনে জমা দিয়ে সবাই মিলে যৌথভাবে নামজারির আবেদন করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ অংশ অনুযায়ী জমির মালিকানা লাভ করবেন, যা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিতর্ক এড়াতে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন:

জমির খতিয়ানে ভুল? দ্রুত সমাধান করুন, বাঁচান অর্থ ও সময়!

নতুন ভূমি আইন: যেসব কাগজপত্র না থাকলে হারাতে পারেন আপনার জমি

নতুন ভূমি আইন: বাতিল ৭ ধরনের দলিল, বাড়ছে জমি সুরক্ষায় শাস্তি

ভূমি সেবার অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে জমির নামজারির আবেদন করার জন্য একটি পরিবার ল্যাপটপে কাজ করছে, যেখানে একজন বয়স্ক ব্যক্তি তার নাতি-নাতনিদের সাথে বসে স্ক্রিনে নির্দেশাবলী অনুসরণ করছেন এবং তাদের হাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পরিচয়পত্র রয়েছে।

২. জমা ভাগ করে নামজারি (একক মালিকানা):

যদি ওয়ারিশগণ নিজেদের মধ্যে জমি ভাগ করে নিতে চান, তবে একটি আপোষ বণ্টননামা দলিল সম্পাদন করে নিজেদের অংশ নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। এরপর সেই দলিলের ভিত্তিতে প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ অংশে একক মালিকানার নামজারির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই পদ্ধতি একক মালিকানা নিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যতের অংশীদারিত্বের জটিলতা থেকে মুক্তি দেয়।

৩. স্বয়ংক্রিয় নামজারি (অটোমেটেড সিস্টেম):

বর্তমানে দেশের ২১টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে যুগান্তকারী স্বয়ংক্রিয় নামজারি ব্যবস্থা। এই আধুনিক পদ্ধতিতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল রেজিস্ট্রির সময়ই সমস্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসিল্যান্ড অফিসে স্থানান্তরিত হয়। ফলে নতুন মালিকের নামে কোনো রকম আবেদন ছাড়াই নামজারি সম্পন্ন হয়ে যায়, যা প্রক্রিয়াটিকে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত করে তুলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জুলাই মাসের মধ্যে দেশের সকল উপজেলায় এই অটোমেটেড নামজারি সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা ও নির্দেশিকা:

ভূমি মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে জানিয়েছে যে, এই নামজারি প্রক্রিয়ায় কোনো দালাল বা তৃতীয় পক্ষের সাহায্যের প্রয়োজন নেই। প্রতারণার হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে নাগরিকদের সরাসরি www.land.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে অথবা সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ ভূমি সেবাকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং সর্বসাধারণের জন্য সহজলভ্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ