
MD Zamirul Islam
Senior Reporter
একাদশ সংসদ: বিএনপির শরিক হেভিওয়েট নেতারা কে কোন আসন চান?

দেশে এখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে জোরেশোরে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাজনৈতিক দলগুলো। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন, আর এটিকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে পুরোদমে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবার ভোটের মাঠে না থাকায়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীই একে অপরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তবে বড় দলগুলোর পাশাপাশি ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও পিছিয়ে নেই; তারাও যার যার মতো আসন ধরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপির আসন বণ্টনের নীতিগত সিদ্ধান্ত: যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের অগ্রাধিকার
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপি তাদের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে যারা বিএনপির পাশে ছিলেন, তাদের মধ্যেই এসব আসন ভাগ করে দেওয়া হবে। এই ঘোষণার পর ছোট দলগুলোর একঝাঁক বড় নেতা জোরেশোরে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামে। এ সময় তাদের সঙ্গী হয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শরিক দলগুলো। এছাড়াও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে সরব ছিল।
গণতন্ত্র মঞ্চ: গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে হেভিওয়েট প্রার্থীরা
সূত্রমতে, গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা নির্দিষ্ট আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন:
আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪): জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)-এর সভাপতি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তার স্ত্রী জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব এই আসনে প্রার্থী হবেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-৪): নাগরিক ঐক্যের সভাপতি।
সাইফুল হক (ঢাকা-৮): বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক।
জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬): গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু (জামালপুর-৫): ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি।
হাসনাত কাইউম (কিশোরগঞ্জ-৫): রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক।
১২ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা
১২ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে যারা নির্বাচনী মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন:
মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১): জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান।
সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫): বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান।
আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২): জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর মহাসচিব।
অ্যাডভোকেট নবাব আলী আব্বাস খান (মৌলভীবাজার-২): দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য।
শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১): বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান।
মাওলানা রশীদ বিন ওয়াক্কাস (যশোর-৫) ও উবাইদুল্লাহ ফারুক (সিলেট-৫): জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
আব্দুল বাছিত আজাদ (হবিগঞ্জ-২) ও ড. আহমদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪): খেলাফত মজলিস।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম যদি ইসলামপন্থি জোটে যায়, তাহলে বিএনপি তাদের জন্য আসন ছাড়বে না।
অন্যান্য শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের আসন ভাবনা
উপরিউক্ত জোটগুলোর বাইরেও বেশ কিছু শরিক দলের শীর্ষ নেতারা নির্দিষ্ট আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন:
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪): এলডিপির চেয়ারম্যান। তিনি নির্বাচনে না দাঁড়ালে তার ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি এই আসনে প্রার্থী হবেন।
ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭): এলডিপির মহাসচিব।
আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭): বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর চেয়ারম্যান।
নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩): গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি।
রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২): গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬): গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু (ফেনী-২): এবি পার্টির চেয়ারম্যান।
ববি হাজ্জাজ (ঢাকা-১৩): ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)-এর চেয়ারম্যান।
ড. রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১): গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে।
ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২): জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-এর চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী মাশরাফি বিন মুর্তজার বিপক্ষে লড়েছিলেন।
প্রার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও বিএনপির প্রতি প্রত্যাশা
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, "আমি ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি এবং এটা আমার নিজের এলাকা। বিএনপি যদি এ আসনটি আমার জন্য ছেড়ে দেয়, তাহলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া এবং নির্বাচনের পর সবাইকে নিয়ে সরকার গঠনের যে প্রতিশ্রুতি বিএনপির রয়েছে, সেটা তারা পূরণ করবে বলে আমি মনে করি।"
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এই প্রসঙ্গে জানান, তাকে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসন থেকে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মৌখিক সমর্থন দিয়েছে। তিনি আশা করছেন, চূড়ান্ত মনোনয়নও পাবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সবার মধ্যে এই ধারণা কাজ করছে যে, বিএনপি ছাড় দিলে বিজয় প্রায় নিশ্চিত। সে কারণে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপির কাছ থেকে নিজেদের আসন আদায় করে নিতে। এক্ষেত্রে কার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে, সেটা নির্ভর করছে বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর। তবে ভোটের মাঠে ছোট দলের বড় নেতারা কোমর বেঁধে নেমেছেন।
আব্দুর রহিম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- উৎপাদন বন্ধ ৩০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ ডিএসইর, বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা
- বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত
- একটিমাত্র চুক্তিতেই যেভাবে ভাগ্য ফিরল মিরাকলের
- তালিকাচ্যুত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য কি সিদ্ধান্ত!
- রাতে ব্যালন ডি'অর ২০২৫: বাংলাদেশ থেকে লাইভ দেখার উপায় ও সময়সূচি
- বিদেশি বিনিয়োগের ঝলকানি: ৬ কোম্পানিতে বাড়ছে বহুজাতিকদের আস্থা
- ভারত ম্যাচের আগে তারকা ক্রিকেটারকে হারালো বাংলাদেশ
- শেয়ারবাজারে প্রতারণা: গোপন কারসাজিতে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা!
- 'বি' ক্যাটাগরি থেকে 'জেড' ক্যাটাগরিতে অবনমন এক কোম্পানির শেয়ার
- ক্রিকেট বিশ্বে শোকের ছায়া: এশিয়া কাপের মাঝেই কিংবদন্তির বিদায়
- আয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও ডিভিডেন্ড অপরিবর্তিত:বিনিয়োগকারীরা হতাশ
- আজ ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ: টাইগারদের একাদশে দুই পরিবর্তন
- কাল দুটি কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ এজিএম, আসতে পারে ডিভিডেন্ড বিষয়ে সিদ্ধান্ত
- এনবিআর-বিএসইসি'র ভুল সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজারে বিপর্যয়
- এশিয়া কাপ সুপার ফোর পয়েন্ট টেবিল: এক নজরে জানুন বাংলাদেশের অবস্থান