ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বাসর রাতের নামাজ: নবদম্পতিদের জন্য বরকতময় দোয়া ও এর সঠিক নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৯ ০৯:২৫:১০
বাসর রাতের নামাজ: নবদম্পতিদের জন্য বরকতময় দোয়া ও এর সঠিক নিয়ম

নবদম্পতিদের দাম্পত্য জীবনকে আল্লাহ তায়ালা'র রহমত ও বরকতে পূর্ণ করতে বাসর রাতে একটি বিশেষ নামাজ আদায়ের প্রচলন রয়েছে, যা "বাসর রাতের নামাজ" বা "শুকরিয়া নামাজ" নামে পরিচিত। যদিও হাদিস শরিফে সরাসরি এই নামের কোনো নামাজের উল্লেখ নেই, তবে এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি নফল ইবাদত হিসেবে সাহাবায়ে কেরামদের আমল থেকে প্রচলিত হয়েছে। বাহক টিভি'র হাফেজ মাওলানা সাব্বির হোসাইন নবদম্পতিদের জন্য এই নামাজ আদায়ের নিয়ম ও এর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ দোয়াসমূহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।

বাসর রাতের নামাজের তাৎপর্য: আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া

মাওলানা সাব্বির হোসাইন বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সরাসরি বাসর রাতের নামাজ হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট নামাজ আদায় করেননি এমন বর্ণনা হাদিসে পাওয়া যায় না। তবে অনেক সাহাবী এই রাতে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। এটি মূলত "শুকরিয়াতান" বা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামাজ। দাম্পত্য জীবনের সূচনালগ্নে আল্লাহকে স্মরণ করে তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং সুখী জীবনের জন্য দোয়া চাওয়া এই নামাজের মূল উদ্দেশ্য। স্ত্রী এমন একজন স্বামী পাওয়ায় এবং স্বামী এমন একজন স্ত্রী পাওয়ায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন, যেন তারা নির্ভুলভাবে সারা জীবন একসাথে কাটাতে পারেন।

নামাজ আদায়ের নিয়মাবলী (২ রাকাত নফল)

এই নামাজ একটি দুই রাকাত বিশিষ্ট নফল নামাজ। সাধারণ ফরয বা সুন্নাত নামাজের মতোই এটি আদায় করতে হয়।

১. প্রস্তুতি ও নিয়ত:

প্রথমে পবিত্রতা অর্জন করে জায়নামাজে দাঁড়াতে হবে।

মনে মনে নিয়ত করতে হবে: "আমি আল্লাহ তায়ালা'র শুকরিয়া আদায়ের জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি।" স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই একই নিয়ত করবেন।

২. প্রথম রাকাত:

"আল্লাহু আকবার" বলে হাত বেঁধে সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা...) পড়তে হবে।

"আউযুবিল্লাহ" ও "বিসমিল্লাহ" সহ সূরা ফাতিহা (আলহামদুলিল্লাহ...) পাঠ করতে হবে।

সূরা ফাতিহার সাথে কুরআন থেকে যেকোনো একটি সূরা মিলাতে হবে।

এরপর রুকু এবং রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর দুটি সিজদা করতে হবে।

সিজদার পর আল্লাহু আকবার বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।

৩. দ্বিতীয় রাকাত:

দ্বিতীয় রাকাতে পুনরায় সূরা ফাতিহা ও তার সাথে যেকোনো একটি সূরা মিলাতে হবে।

এরপর রুকু, তারপর সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং দুটি সিজদা আদায় করতে হবে।

সিজদার পর বসে তাশাহহুদ, দরুদ শরিফ (দরুদ-ই-ইব্রাহিম) এবং দোয়া মাসুরা পাঠ করতে হবে।শেষে ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।

স্বামী-স্ত্রীর একত্রে বা আলাদাভাবে নামাজ:

এই নামাজ স্বামী-স্ত্রী আলাদাভাবেও আদায় করতে পারেন, আবার চাইলে একত্রে জামাত করেও পড়তে পারেন। যদি একত্রে পড়া হয়, তবে স্বামী ইমামতি করবেন এবং স্ত্রী তার পেছনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবেন।

নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া (প্রিয়নবী সা.-এর সুন্নাত)

নামাজ শেষ করার পর স্বামী তার স্ত্রীর মাথার সামনের চুল ধরে হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া পাঠ করবেন।

দোয়াটি হলো:

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهَا وَخَيْرِ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ

উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরিহা ওয়া খাইরি মা জুবিল্লাহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জুবিল্লাহি।"

অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এর (স্ত্রীর) মধ্যে নিহিত কল্যাণ প্রার্থনা করি এবং যে কল্যাণ এর মধ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে, তাও কামনা করি। আমি তোমার নিকট এর (স্ত্রীর) অনিষ্ট হতে এবং যে অনিষ্ট সহ একে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা হতে আশ্রয় চাই।"

দোয়ার পরবর্তী আমলসমূহ:

এই দোয়া পাঠের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একবার দরুদ শরিফ (যেমন: দরুদ-ই-ইব্রাহিম) পাঠ করবেন।

এরপর তিনবার ইস্তেগফার (আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহ) পড়বেন।

সবশেষে, উভয়ই আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে মোনাজাত করবেন। এই মোনাজাতে তারা নিজেদের দাম্পত্য জীবনের সুখ, শান্তি, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সুসন্তান এবং সমস্ত অমঙ্গল থেকে মুক্তির জন্য কাকুতি-মিনতি করে দোয়া চাইবেন।

মোনাজাত শেষে "আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন" বলে দু'হাত মুখে বুলিয়ে মোনাজাত শেষ করবেন।

পুনরায় একবার দরুদ শরিফ পড়ে নেবেন।

এই প্রক্রিয়ায় বাসর রাতের নামাজ ও দোয়া আদায়ের মাধ্যমে নবদম্পতিরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভে ধন্য হতে পারেন এবং তাদের দাম্পত্য জীবন সুখ-শান্তিতে ভরে উঠবে বলে আশা করা যায়।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ