ঢাকা, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ১৯:৩৩:৪৭
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি ইসলামি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রস্তাবিত একীভূতকরণ প্রসঙ্গে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে জোরালো দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি জরুরি চিঠি পাঠিয়েছে পুঁজিবাজারের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসি'র চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, একীভূতকরণের সিদ্ধান্তে যেখানে আমানতকারীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেখানে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর সাধারণ শেয়ারহোল্ডার বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। তাই বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ক্ষতিপূরণবিহীন একীভূতকরণ: বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, 'ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫' অনুযায়ী, একীভূত ব্যাংকে পুরনো শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। নতুন ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও, সেখানে বিদ্যমান পাঁচটি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের কোনো শেয়ার থাকবে না। নতুনভাবে ইস্যু করা শেয়ার দিয়েই নতুন ব্যাংকের মূলধন গঠন করা হবে, যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ।

দায়ী কারা? উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের দিকে আঙুল

তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামি ধারার এই পাঁচটি ব্যাংকের বর্তমান সংকটের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন। বরং দায়ী ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা, যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও তারল্য সংকট তৈরির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে দায় নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রশ্ন উঠেছে—সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো দায় না থাকলে কেন তাদের বিনিয়োগ শূন্যে পরিণত হবে?

বিএসইসি'র সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা

এ প্রেক্ষাপটে বিএসইসি তাদের চিঠিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং এক্সিম ব্যাংক পিএলসি'র একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। কমিশন চারটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছে:

সম্পদমূল্য পুনর্মূল্যায়ন: ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স, ব্র্যান্ড ভ্যালু, ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক, ক্লায়েন্ট বেজ ও মানবসম্পদসহ সামগ্রিক সম্পদমূল্য পুনর্মূল্যায়ন করে বিনিয়োগকারীর অংশ নির্ধারণ করা।

দায় নির্ধারণ: ব্যাংকের ঋণ জামানত, দায়ী ব্যক্তিপণ ও তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিবেচনায় এনে বিনিয়োগকারীর স্বার্থমূল্য নির্ধারণ করা।

ক্ষতিপূরণমূল্য নির্ধারণ: ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর ধারা ৭৭ অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তি ছাড়া অন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ন্যূনতম ক্ষতিপূরণমূল্য নির্ধারণ করা।

তালিকাভুক্তি সুরক্ষা: বিনিয়োগকারীর স্বার্থমূল্য অনুপাত নির্ধারণ ও ঘোষণা না করে কোনো ব্যাংককে তালিকাচ্যুত না করার অনুরোধ জানানো।

বিএসইসি মনে করে, একীভূত ব্যাংকের তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হলে শেয়ারবাজারে আস্থা আরও ভেঙে পড়বে। তাই সরকার যেমন আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, তেমনি শেয়ারহোল্ডারদেরও একই গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলে কমিশন মনে করে।

বাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীর আস্থা রক্ষার আহ্বান

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিএসইসি দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষা এবং সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ ব্যাংক বিএসইসি'র এই প্রস্তাবনাগুলো কতটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কী ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ