ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ: ৮১ পয়েন্টের ধসে ২৩ কোম্পানি বিধ্বস্ত!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৫ ১৯:১৮:৫৫
বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ: ৮১ পয়েন্টের ধসে ২৩ কোম্পানি বিধ্বস্ত!

দেশের শেয়ারবাজারে আজ যেন মহাপ্রলয়। ডিএসই-এর প্রধান সূচক এক দিনেই প্রায় ৮১ পয়েন্টের বিশাল পতনের সাক্ষী হয়ে নেমে এসেছে এক মহাবিপর্যয়। এই তীব্র দরপতনের শিকার হয়েছে মূলত স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলো। যাদের পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার নিচে, এমন ২৩টি কোম্পানির শেয়ারের দরে আজ বড় ধরনের ঝাঁকুনি দেখা গেছে, যা বাজারের সামগ্রিক আস্থার অভাবকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

ভেঙে গেল বাজারের পুরনো রীতি: ছোট কোম্পানিও রক্ষা পেল না!

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে সাধারণত এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, বড় ধরনের পতনের দিনে তুলনামূলকভাবে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে বা কম প্রভাবিত হয়। এর কারণ, এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম হওয়ায় বাজারে ফ্লোটিং শেয়ারের সরবরাহও কম থাকে। তবে, আজকের ৮১ পয়েন্টের ধসে এই রেওয়াজও ভেঙে গেছে। কাঠামোগতভাবে দুর্বল এই ২৩টি স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারেও আজ তীব্র প্যানিক সেলিং দেখা গেছে, যার ফলে তাদের দরেও বিশাল পতন ঘটেছে। এটি প্রমাণ করে যে, বাজারের এই রক্তক্ষরণ এতটাই তীব্র ছিল যে কোনো ধরনের প্রতিরোধই কাজ করেনি, যা এক প্রকার দুষ্টচক্রের সৃষ্টি করেছে।

ধ্বংসের মুখে টেক্সটাইল, খাদ্য, ফার্মা ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাত!

আজকের এই অভূতপূর্ব ধসে দেশের টেক্সটাইল, খাদ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের স্বল্প মূলধনের কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে: আম্বি ফার্মা, এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং (প্রাণ), এপেক্স ফুডস, এপেক্স স্পিনিং, আরামিট লিমিটেড, আজিজ পাইপস, বাঙ্গাস, বাংলাদেশ অটোগারস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, জি কিউ বল পেন, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ, জুট স্পিনার্স, কে অ্যান্ড কিউ, লাইব্রা ইনফিউশনস, মনো এগ্রো, নর্দার্ন জুট, রহিম টেক্সটাইল, রেকিট বেনকিজার, শ্যামপুর সুগার এবং স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস।

যদিও এই তালিকায় এএমসিএল-প্রাণ ও রেকিট বেনকিজারের মতো কিছু সুপরিচিত শক্তিশালী কোম্পানি রয়েছে, কিন্তু তাদের স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কারণেই আজকের বাজারের ধাক্কা সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের চোখের সামনে তাদের কষ্টার্জিত বিনিয়োগের মূল্য দ্রুত কমে যাওয়ায় নেমে এসেছে গভীর হতাশা।

একমাত্র জিলবাংলা সুগার মিলস-ই আশার আলো!

তবে, এই ব্যাপক পতনের মধ্যেও আশার ক্ষীণ আলো দেখিয়েছে একমাত্র জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটি আজ কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা নিয়ে লেনদেন শেষ করেছে, যা সামগ্রিক হতাশাজনক বাজারের মাঝে এক বিরল ব্যতিক্রম। তবে, এটি বাজারের মূল চিত্র নয়, বরং চরম নেতিবাচকতার বিপরীতে একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ মাত্র।

বাজার স্থিতিশীলতায় জরুরি সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি

এই বিশাল দরপতনের মুখে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের প্রধান দাবি হলো—নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবিলম্বে এই বড় পতনের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। একই সাথে, কোন ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে অস্বাভাবিক এবং প্যানিক সেলিং হয়েছে, তা চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। যারা আতঙ্ক সৃষ্টি করে বাজারকে আরও দুর্বল করছে, সেই চিহ্নিত হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেই কেবল বাজারে শৃঙ্খলা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ