ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

এপেক্স ট্যানারির ডিভিডেন্ডে ৪০ বছরের রেকর্ড ভাঙল! বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৪ ২১:০৯:৩৮
এপেক্স ট্যানারির ডিভিডেন্ডে ৪০ বছরের রেকর্ড ভাঙল! বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যতম পুরোনো কোম্পানি এপেক্স ট্যানারি লিমিটেড তার ৪০ বছরের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩০ জুন, ২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, তবে এবার আরও খারাপ

এপেক্স ট্যানারি ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে তার শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছিল। এর আগে কেবল ২০০০ সালে একবার কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড দেওয়া থেকে বিরত ছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক, কারণ এটি পরপর দুই বছর লোকসানের পর ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

লোকসানের রেকর্ড ভাঙল এপেক্স ট্যানারি

কোম্পানির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত অর্থবছরে এপেক্স ট্যানারির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৪ টাকা ৬২ পয়সা, যা তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড লোকসান। এর আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৮ টাকা ৩১ পয়সা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে লোকসানের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই বিপুল লোকসানই ডিভিডেন্ড না দেওয়ার মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ক্যাশ ফ্লোতে কিছুটা স্বস্তি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়

তবে হতাশার মধ্যেও একটি আশার আলো দেখা গেছে কোম্পানির ক্যাশ ফ্লোতে। সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ১ টাকা ৮৭ পয়সা। ক্যাশ ফ্লো বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক দিক হলেও, রেকর্ড পরিমাণ লোকসানের সামনে তা যথেষ্ট নয়।

সম্পদ মূল্যের পতন

৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ১৯ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৪৫ টাকা ৪৩ পয়সা। নিট সম্পদ মূল্যের এই উল্লেখযোগ্য পতন কোম্পানির আর্থিক অবস্থার দুর্বলতাকেই নির্দেশ করে।

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ

দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে আসা এপেক্স ট্যানারির এই সিদ্ধান্তে তাদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানিটি অতীতে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ৪৫ শতাংশ করে ক্যাশ ডিভিডেন্ডের মতো আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ডও দিয়েছিল। এমনকি, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বড় লোকসানে থাকা সত্ত্বেও ৫ শতাংশ করে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল, যা ছিল তালিকাভুক্তির পর সর্বনিম্ন।

এপেক্স ট্যানারির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার সকাল ১১টায়, হাইব্রিড পদ্ধতিতে। সভার জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ নভেম্বর। বিনিয়োগকারীরা এখন এজিএম-এর দিকে তাকিয়ে আছেন, যেখানে কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের কৌশল সম্পর্কে জানতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এপেক্স ট্যানারির এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন কোম্পানিটির ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায়।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ