Alamin Islam
Senior Reporter
ভূমি নামজারি: সরকারি ফি ১১৭০ টাকা, চাওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪ লাখ!
স্বচ্ছতা আনয়নে ব্যর্থ ভূমি মন্ত্রণালয় একা; গণমাধ্যমসহ অংশীদারদের সহযোগিতা চান সচিব
ভূমি নামজারি বা মিউটেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সরকার নির্ধারিত সর্বমোট ফি মাত্র এক হাজার ১৭০ টাকা। কিন্তু এই সাধারণ কাজটি সারতে গিয়ে ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী সাধারণ মানুষের কাছে চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করছেন—এমন উচ্চাভিলাষী অর্থ দাবির কথা তিনি নিজেও শুনেছেন বলে স্বীকার করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ।জনবান্ধব ভূমি সেবা নিশ্চিতের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই ধরনের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এএলএএমএস) আয়োজনে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে ভূমি সচিব এই উদ্বেগের কথা জানান।
সংকট উত্তরণে সহায়তা কেন্দ্র: ঢাকায় চারটি, দেশজুড়ে ৮১৫
ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, ভূমি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে নিয়মের আওতায় আনার জন্য ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় চারটি কেন্দ্র চালু হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ৮১৫টি ভূমি সহায়তা সেবা কেন্দ্র সচল রয়েছে। এছাড়া, আরও বহু সংখ্যক কেন্দ্র বর্তমানে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কার্যালয়ে পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে।
এই কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং উদ্যোক্তাদের ফিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের নির্দেশিকা মেনে সহায়তা কেন্দ্রে উদ্যোক্তা নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কেন্দ্রের সংখ্যা যত বাড়বে, নাগরিকরা তত সহজে সেবা পাবেন। পাশাপাশি, শিগগিরই চালু হবে মোবাইলভিত্তিক একটি বিশেষ লিংক, যার মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের আশপাশের ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্রগুলোর অবস্থান জানতে পারবেন।
১০ লাখের বেশি মামলা, হয়রানি রোধে অনলাইন সেবা
ভূমি সচিব স্বীকার করেন, ভূমি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ ব্যাপক হয়রানির শিকার হন। এই হয়রানি বন্ধ করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে ভূমিসেবা স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে পাঁচটি অনলাইনভিত্তিক সেবা চালু করা হয়েছে।
তিনি জানান, ভূমি সমস্যা এতো ব্যাপক যে, একজন মানুষের পক্ষে সারাজীবন চেষ্টা করেও তা শেষ করা কঠিন। ভূমি সংক্রান্ত মামলার চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে প্রতিদিন সাধারণত কয়েক হাজার মামলা হয় এবং বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কোর্টে ভূমি সংক্রান্ত ১০ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
তবে ভূমি সচিব মনে করেন, একটি সৎ, স্বচ্ছ ভূমি ব্যবস্থাপনা এককভাবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে গড়ে তোলা সম্ভব নয়; এজন্য গণমাধ্যমসহ অন্যান্য অংশীদারদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি জানান, বর্তমানে চালু অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই পর্চা সংগ্রহ, নকশা পাওয়া এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যাচ্ছে। এছাড়া, একসময় বালু মহাল নিয়ে যে বিশৃঙ্খলা ছিল, তা একটি নির্দিষ্ট শাখার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের ফলে অনেকটাই কমে এসেছে।
রাজস্ব আহরণে উল্লম্ফন: তিন মাসে বেড়েছে ৮৭ কোটি টাকা
সেমিনারে ডিজিটাল ভূমি সেবার অগ্রগতি এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, অটোমেটেড ভূমি সেবার সুবিধা দৃশ্যমান হচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
রাজস্ব বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই তিন মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৮৭ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১১৫৪ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২২ কোটি টাকা বেশি। সেবাগ্রহীতাদের সংখ্যাও বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নাগরিকরা ২৭ লাখ দাখিলা (রসিদ) নিয়েছিলেন, যা পরের অর্থবছর ২০২৪-২৫-এ ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে।
এছাড়া, ১৬১২২ কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং এখানে দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কল গ্রহণ করা হয়।
তবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ভূমি খাতের মূল সমস্যা হলো দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সেবা সহজ করা। একই সাথে ভেন্ডার নির্ভরশীলতা হ্রাস করা, নির্ভুল তথ্যের জন্য ডিজিটাইজড জরিপ নিশ্চিত করা এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে তিনি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাসউদুল হক সভাপতিত্ব করেন এবং সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল সঞ্চালনা করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এবং নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরমেন্স (ডিকেএমপি) অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ: টি-২০ সিরিজের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি প্রকাশ, কবে কখন খেলা?
- বাড়লো সোনার দাম, জানুন দুবাইসহ বাংলাদেশে সোনার ভরি কত
- শেয়ারবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা: উঠে এলো ভয়াবহ তথ্য
- বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজ: কখন, কোথায় ম্যাচ, জানুন সময়সূচি
- রেকর্ড ১০৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণার তারিখ প্রকাশ
- ব্যাপক হারে কমলো সোনার দাম, জানুন২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত
- বাংলাদেশ বনাম থাইল্যান্ড: ৯০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- বাংলাদেশ বনাম থাইল্যান্ড: হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হলো ম্যাচ, জেনে নিন ফলাফল
- আজ বাংলাদেশ বনাম থাইল্যান্ড ম্যাচ: লাইভ দেখার সহজ উপায়,জেনে নিন
- আজ বাংলাদেশ বনাম থাইল্যান্ড ম্যাচ: প্রথমার্ধ শেষ, জেনে নিন সর্বশেষ ফলাফল
- সকালে ইন্টার মায়ামি বনাম ন্যাশভিল ম্যাচ: সম্ভাব্য একাদশ ও সময়সূচি
- ৬০ আসন নিয়ে বিএনপি নিশ্চিন্ত, তালিকা প্রকাশ
- কমেছে সোনার দাম, জানুন২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত
- আজ ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে দেশের যেসব এলাকায়