ঢাকা, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালামের শেষ ফেসুবক স্ট্যাটাস ভাইরাল

সারাদেশ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৭ ১২:২৯:৫১
বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালামের শেষ ফেসুবক স্ট্যাটাস ভাইরাল

ঢাকার বুকে চলমান মেট্রোরেলের নির্মাণজনিত অব্যবস্থা কেড়ে নিল আরও একটি প্রাণ। গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে খসে পড়া একটি বেয়ারিং প্যাড আঘাত হানলে মৃত্যু হয় আবুল কালাম আজাদ (৪০) নামে এক ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালকের। তার এই আকস্মিক মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তার দেওয়া এক মর্মস্পর্শী শেষ স্ট্যাটাস, যেখানে তিনি যেন মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

ভাইরাল হওয়া শেষ বার্তা

দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আবুল কালাম আজাদ তার ফেসবুকে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “ইচ্ছা তো অনেক, আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম।”

তার কাছের মানুষজন এমন মর্মান্তিক উপায়ে তার সেই ‘পলায়ন’ বাস্তবে রূপ নেবে, তা কখনও ভাবতেও পারেননি।

যেভাবে ছায়া নামল ফার্মগেটে

রোববার দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে ফার্মগেট এলাকায় এসেছিলেন আজাদ। হঠাৎই মেট্রোরেলের ওপর থেকে একটি ভারী ধাতব অংশ, যা বেয়ারিং প্যাড নামে পরিচিত, স্থানচ্যুত হয়ে দ্রুত নিচে পড়ে যায়। এই ভারি যন্ত্রাংশটি সরাসরি আঘাত করে পথচারী আবুল কালাম আজাদের মাথায়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ব্যবসায়ী কালামের পরিচয়

জানা গেছে, নিহত আবুল কালাম আজাদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার শিক্ষা জীবন শেষ করে রাজধানীতে একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালাতেন। ব্যবসার প্রয়োজনে তাকে নিয়মিতই ফার্মগেট এলাকায় আসা-যাওয়া করতে হতো। এমনকি ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও তিনি প্রায়শই ওই এলাকা ব্যবহার করতেন।

অসহায় হয়ে পড়ল দুই শিশুসন্তানসহ পরিবার

চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আবুল কালাম আজাদ তার স্ত্রী, ৫ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ এবং ৩ বছরের মেয়ে সুরাইয়া আক্তারকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায় বাস করতেন। তিনি ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।

নিহতের ভাবী আছমা আক্তার গভীর বেদনায় তার শেষ কথোপকথনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “দুপুর ১২টার দিকে ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। তখন সে বলেছিল, দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসবে এবং আমার কাছে ইলিশ মাছ কিনে রাখতে বলেছিল।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড পড়ে তার মৃত্যুর খবর শুনেছেন। পরিবারের একমাত্র ভরসা হারিয়ে যাওয়ায় তিনি ঘটনার ন্যায্য ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।

নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার এই মৃত্যুকে মেনে নিতে না পেরে সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই কালাম ছিল অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং নিজের চেষ্টায় ঢাকায় ব্যবসা শুরু করেছিল। আমরা মনে করি, সরকারি অবহেলার কারণেই আজ আমাদের ভাইটির জীবন গেল। সরকারের উচিত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো।”

ক্ষতিপূরণের আশ্বাস

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান এই দুর্ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ