Alamin Islam
Senior Reporter
আবারও এক লাফে কমলো সোনার দাম
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মূল্যে ঐতিহাসিক পতন: এক সপ্তাহে দাম কমল ২০১৩ সালের সর্বোচ্চ হারে
দীর্ঘদিন ধরে চলা ঊর্ধ্বগতির পর এবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় ধরনের সংশোধন শুরু হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে যে তেজি ভাব দেখা গিয়েছিল, বছরের শেষভাগে এসে তাতে ছেদ পড়ল। মূল্যবান এই ধাতবটির বাজারমূল্য বর্তমানে নিম্নমুখী প্রবণতার শিকার।
সোমবার বিশ্বজুড়ে সোনার দাম ৩ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। এখানেই অস্থিরতা থামেনি; মঙ্গলবার দিনের শুরুতে নিউ ইয়র্কের বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩ হাজার ৯৯০ ডলারে দাঁড়ায়।
রেকর্ড পতন: এক সপ্তাহে কমল ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে
স্বর্ণের মূল্য পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের দেওয়া তথ্য অনুসারে, সব মিলিয়ে গত এক সপ্তাহে সোনার মূল্যে ৮ শতাংশের বেশি পতন ঘটেছে। এটি ২০১৩ সালের পর এক সপ্তাহে হওয়া সোনার মূল্যের সর্বোচ্চ হ্রাস। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছর ধরে চলা সোনার মূল্যবৃদ্ধির গতি পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেল।
যে কারণে এত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছিল
এই পতনের আগে চলতি বছর বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। মূলত ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা এবং ডলারের বিনিময়মূল্য হ্রাসের কারণে বিনিয়োগকারীরা সুরক্ষিত সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকেছিলেন। এর আগে করোনা মহামারির সময়েও এমন তীব্র 'গোল্ড রাশ' বা সোনার মূল্যের উল্লম্ফন দেখা যায়। পরে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছিল। তবে গত দুই বছরে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ আবারও নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণকে বেছে নেয়। খবর ইকোনমিক টাইমস।
বাজারের মানসিকতার পরিবর্তন ও ডলারের চাপ
কিন্তু বর্তমানে বাজারের মানসিকতায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ডলারের শক্তিশালী হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন লাভ তুলে নিচ্ছেন। ডলার সূচক বা ডলার ইনডেক্স ১০৬-এর ওপরে উঠে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সোনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে, যার ফলস্বরূপ বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের চাহিদা কমে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় এবং শেয়ার ও বন্ড বাজারে বিনিয়োগকারীরা পুনরায় ঝুঁকি নিতে উৎসাহী হওয়ায়, বছরের শুরুতে সোনার প্রতি যে প্রবল আকর্ষণ ছিল, তাতে সুস্পষ্ট ভাটা পড়েছে।
ভবিষ্যৎ পতনের প্রযুক্তিগত আশঙ্কা
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণও সোনার দাম কমার পালে নতুন করে হাওয়া দিচ্ছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ৫০ থেকে ৪ হাজার ডলার হলো সোনার দামের আদর্শ মানদণ্ড। যদি দাম এই সীমার নিচে নেমে যায়, তবে তা আরও বড় পতনের ইঙ্গিত দেবে—যা দামকে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ ডলারের দিকে নামিয়ে আনতে পারে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সোনার দাম এই সীমার ওপরে থাকলে বাজারে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের আগে তা কিছুদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে বা সীমিত সীমার মধ্যে ওঠানামা করবে।
বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া: মুনাফা সংগ্রহ ও সতর্ক আশাবাদ
স্বল্পমেয়াদী লগ্নিকারীরা, যারা মূল্যবৃদ্ধির শেষদিকে বিনিয়োগ করেছিলেন, এখন তাদের অনেকেই নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ লাভ তুলে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বন্ডের মতো ডলার-ভিত্তিক সম্পদে ফিরে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা এখনো সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। তাঁদের বিশ্বাস, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, ২০২৬ সালে সুদের হার কমার সম্ভাবনা এবং বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিকভাবে সোনা কেনা—এগুলো সবই সোনার বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।
স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস
বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যদি বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে এবং মার্কিন ডলারের শক্তি বজায় থাকে, তবে স্বল্প মেয়াদে সোনার দাম আরও কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তবে যদি মূল্যস্ফীতি নতুন করে বাড়ে অথবা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তবে বিনিয়োগকারীরা 'নিরাপদ বিনিয়োগ' হিসেবে আবারও সোনার দিকে ঝুঁকতে পারেন।
বাজার বিশ্লেষকদের সাধারণ মত হলো, টানা কয়েক মাসের উচ্ছ্বাসের পর সোনার দৌড় আপাতত গতি হারিয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে, বাজারের গতিশীলতা আর ফিরবে না।
সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, সাম্প্রতিক দরপতনের পরও ২০২৬ সালে সোনার বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরতে পারে। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ সোনার দাম প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। পূর্বাভাস অনুসারে, দাম প্রথমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ডলারে এবং পরে তা বেড়ে প্রায় ৪ হাজার ৪৪০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
দেশের বাজারে প্রভাব
বিশ্ববাজারে সোনার দামের এই ওঠানামার ওপর ভিত্তি করেই দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়। এর ফলস্বরূপ, ২২ অক্টোবর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছিল।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- কিছুক্ষণ পর রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা ম্যাচ: সরাসরি দেখুন (Live)
- শেয়ারবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা: উঠে এলো ভয়াবহ তথ্য
- রবি আজিয়াটার তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ: রেকর্ড নিট মুনাফা
- ভরিতে ১৩,০৯৯ টাকা কমলো স্বর্ণের দাম, ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের ভরি কত
- আজ রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা-এল ক্লাসিকো: লাইভ দেখার সহজ উপায়
- রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা: ৯০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- ২১ কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
- রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা: ৮০ মিনিটের খেলা শেষ, জেনে নিন ফলাফল
- চলছে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা ম্যাচ: গোল, গোল, সরাসরি দেখুন (Live)
- ৭ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা: রেকর্ড মুনাফায় কোহিনূর কেমিক্যালস
- রেকর্ড মুনাফায় কোহিনূর কেমিক্যালস, ১৪ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- আজ বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টি-টোয়েন্টি: লাইভ দেখার উপায় ও সময়সূচি
- মার্জিন ঋণ বিধিমালায় আমূল সংস্কার: আবারও অস্থির শেয়ারবাজার
- চলছে বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ: সরাসরি দেখুন (Live)
- ৬০ আসন নিয়ে বিএনপি নিশ্চিন্ত, তালিকা প্রকাশ