ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

ভুল স্বীকার জয়ের, দিলেন নতুন বার্তা

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৪ ১৯:৪৪:৩৬
ভুল স্বীকার জয়ের, দিলেন নতুন বার্তা

ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অবশেষে স্বীকার করেছেন যে, তার মায়ের সরকারের সময়ে কিছু ভুল-ত্রুটি ছিল। তবে তিনি জাতিসংঘের সেই রিপোর্টটি প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছে—অভ্যুত্থান দমনের সময় সরকার প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছিল।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় সতর্ক করে বলেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি অবিলম্বে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয় এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন নিশ্চিত না করে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি লাগামহীনভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।

তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা আবশ্যক এবং নির্বাচন হতে হবে সার্বজনীন, মুক্ত ও নিরপেক্ষ। জয় দাবি করেন, বর্তমানে যা কিছু ঘটছে, তা মূলত একটি রাজনৈতিক ফন্দি, যার উদ্দেশ্য হলো তার মা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।

রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও নির্বাচনের শর্ত

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর প্রথম ভোট। ক্ষমতাচ্যুতির তিন দিন পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তবে গত মে মাসে তার সরকার আওয়ামী লীগের সমস্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু করে। এর ফলে বহু নেতা-কর্মী ভারতে এবং অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। বর্তমানে হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে শুরু করে দুর্নীতির নানা অভিযোগে একাধিক মামলা চলমান।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ)-সহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্প্রতি ড. ইউনূসের প্রতি একটি যৌথ চিঠি পাঠিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত 'অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা' দ্রুত প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েছে। তারা মনে করে, এই নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতাসহ শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্তদের গ্রেপ্তারের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

জয় বলেন, আওয়ামী লীগকে যদি নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া না হয়, তাহলে সেই নির্বাচন জনগণ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, এখনই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে বাধা দেওয়া হলে, শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও নির্বাচনটি নিছক একটি প্রহসনে পরিণত হবে।

জামায়াতকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ ইউনূসের বিরুদ্ধে

বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষের এই সংসদীয় গণতন্ত্রে ৫২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থাকলেও, হাসিনা সরকারের পতনের পরেও দেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া এখনো অমীমাংসিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রস্তুত।

তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হলো—এক দশকেরও বেশি সময় পর নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে ফিরে আসা। গত বছর ধরে তারা সংগঠন পুনর্গঠন করে অন্যান্য ইসলামপন্থী দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বাঁধতে চাইছে। জয় সতর্ক করেছেন, অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে চরমপন্থীরাই সুবিধা পাবে।

তিনি অভিযোগ করেন, ড. ইউনূস এই ইসলামপন্থীদের সমর্থন যোগাচ্ছেন এবং একটি 'প্রহসনের নির্বাচন' সাজিয়ে তাদের ক্ষমতায় আনতে চাইছেন।

মানবাধিকার প্রশ্নে পালটা আক্রমণ

অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে সেগুলোর তদন্তের দাবি জানান জয়। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ইউনূস সরকার অভ্যুত্থানের সময়কার সহিংসতাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছে এবং শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ‘ডাইনি-শিকারের’ অভিযান শুরু করেছে। গত সপ্তাহে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এক প্রসিকিউটর হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন। হাসিনা এই বিচারকে 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' অভিহিত করে কোনো আইনি সহায়তা নেননি।

জয় আরও দাবি করেন, ইউনূস সরকারের মানবাধিকার পরিস্থিতিও চরম উদ্বেগজনক। তার বক্তব্য অনুযায়ী, হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা জামিনে কারাগারে আছেন, প্রায় ৫০০ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৩১ জন হেফাজতে মারা গেছেন। তিনি আরও গুরুতর অভিযোগ করেন যে, বর্তমানে সংখ্যালঘুরা, বিশেষ করে হিন্দুরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে।

তানভির ইসলাম

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ