Alamin Islam
Senior Reporter
বিদ্রোহের মুখে বিএনপি: ৪০ আসনে প্রার্থী বদল বা সমঝোতার সম্ভাবনা?
মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষের ঢেউ আছড়ে পড়ছে, যা চল্লিশটিরও অধিক সংসদীয় আসনে চরম আকার ধারণ করেছে। মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার জেরে অনেক এলাকায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংহতি দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দলের ভেতরের খবর অনুযায়ী, এই মনোনয়ন-সংক্রান্ত বিরোধের কারণে অনেক প্রভাবশালী নেতা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে লড়ার চিন্তা করছেন, যা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদ্বেগের প্রধান কারণ। এই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে মিছিল, সমাবেশ এবং সড়ক অবরোধের মতো প্রতিবাদী কার্যক্রমে। গতকাল শনিবারও (তথ্য অনুযায়ী) কমপক্ষে আটটি এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে।
সংকট নিরসনে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ
এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করেছেন। দায়িত্বশীল নেতারা একে একে সংঘাতপূর্ণ আসনগুলোর সব পক্ষকে ঢাকায় তলব করে আলোচনা করছেন এবং ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সূত্র মারফত জানা গেছে, কিছু কিছু আসনে প্রার্থী তালিকা পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনাও রয়েছে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আলাপকালে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জানিয়েছেন যে, প্রার্থিতা পরিবর্তন না হলে বিজয়ের পথে অনেক বাধা আসবে। কেউ কেউ নিরপেক্ষ জরিপের মাধ্যমে পরিস্থিতি মূল্যায়নের অনুরোধও করেছেন। একই সঙ্গে তারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন কোনো কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিক্ষুব্ধ নেতাদের ঢাকায় ডেকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহসহ বিরোধপূর্ণ সব আসনের বঞ্চিতদের সাথে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো কোনো আসনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেও প্রার্থীদের সাথে কথা বলছেন বলে জানা গেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, যেহেতু অনেক স্থানেই একাধিক যোগ্য নেতা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ছিলেন, তাই কিছু ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যে আলোচনার মাধ্যমে এসব অসন্তোষ মিটিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
নাটোর ও ফেনীর আলোচিত ঘটনা
মনোনয়ন বিতর্ক নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা আসনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া)। এখানে প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন (পুতুল) প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম (টিপু) এবং ফারজানার আপন ভাই ইয়াছির আরশাদ (রাজন) ক্ষুব্ধ হয়েছেন। দুজনেই এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন।
এই পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত মঙ্গলবার (তথ্য অনুযায়ী) তাইফুল ইসলাম ও ইয়াছির আরশাদকে গুলশানের কার্যালয়ে ডেকে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কর্মকাণ্ড না করার নির্দেশনা দেন। তাইফুল ইসলাম এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন যে তিনি প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত দলের মূল্যায়নের অপেক্ষায় থাকবেন।
অন্যদিকে, ফেনী-২ আসনে দেখা গেছে এক শৈল্পিক প্রতিবাদ। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন (আলাল) মাথায় হ্যাট পরে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারের ভঙ্গিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে প্রতীকী 'রিভিউ' আবেদন জানান। তার এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে। আলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতিতে শৈল্পিকতা রেখে যেতে চান এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন।
মাদারীপুরে সড়ক অবরোধ ও প্রার্থী স্থগিত
মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণার সাথে সাথেই আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এই প্রতিবাদের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করা হয় এবং আসনটিতে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।
লাভলু সিদ্দিকীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকলেও শীর্ষ নেতৃত্ব তার গত নির্বাচনের ব্যর্থতা বিবেচনা করছেন। অন্যদিকে, শিল্পপতি কামাল জামান মোল্লাকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আন্দোলনে ভূমিকা ও সামাজিক অবস্থানের কারণে দল তাকে উপেক্ষা করতে পারছে না। জানা গেছে, জয়-পরাজয়ের সমীকরণ মিলিয়ে এই আসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কাফনের কাপড় পরে প্রতিবাদ ও অন্যান্য বিক্ষোভ
প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দুটি আসনে বিক্ষোভ মিছিলসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ কাফনের কাপড় পরিধান করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আসন দুটি হলো নোয়াখালী-৫ এবং দিনাজপুর-২। এছাড়া, দিনাজপুর-২ আসনে মশালমিছিল, ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিও পালিত হয়েছে।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনেও প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মশালমিছিল হয়েছে। কুমিল্লা-৬ ও কুমিল্লা-৯ আসনেও কোন্দল পুরোনো রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর আসলাম চৌধুরীর সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে দলীয় নির্দেশে আসলামপন্থি চার স্থানীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।
এছাড়াও, চাঁদপুর-২ ও চাঁদপুর-৪, সুনামগঞ্জ-১, ৩ ও ৫, সিলেট-৩, ফরিদপুর-৩ ও ১, রাজবাড়ী-১, মাগুরা-২, সাতক্ষীরা-২ ও ৩, টাঙ্গাইলের চারটি আসন (১, ২ ও ৮ উল্লেখযোগ্য), কুষ্টিয়ার তিনটি আসন (২, ৩ ও ৪) এবং গাইবান্ধা-৪ আসনেও মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে তীব্র বিভেদ ও বিক্ষোভ বিদ্যমান। রাজশাহী, পাবনা, জয়পুরহাট ও নওগাঁর ঘোষিত প্রায় সব আসনেই একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
ঐক্যের গুরুত্ব এবং বিদ্রোহীদের নিয়ে উদ্বেগ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই ধরনের বিক্ষোভকে একটি বৃহৎ দলের মধ্যেকার 'প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা' হিসেবেই দেখছেন এবং আশা করছেন যে এই ধরনের ক্ষোভ চার-পাঁচটির বেশি আসনে স্থায়ী হবে না।
তবে দলের ভেতরের একাধিক নেতার মতে, কিছু আসনে 'প্রভাবশালীদের পছন্দের' প্রার্থী দেওয়াই মাঠের এই তীব্র অসন্তোষের অন্যতম বড় কারণ। এই বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ এবং দলীয় বিদ্রোহের আশঙ্কা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অনেক নেতাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়তে পারেন, যা বিএনপির ভোটব্যাংকের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেতারা।
FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর)
প্রশ্ন ১: বিএনপির কতটি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে?
উত্তর: ৪০টিরও বেশি আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
প্রশ্ন ২: বর্তমান বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
উত্তর: দায়িত্বশীল নেতারা একে একে বিরোধপূর্ণ আসনের সব পক্ষকে ঢাকায় ডেকে কথা বলছেন এবং সমঝোতার চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনাও রয়েছে।
প্রশ্ন ৩: নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে অসন্তোষের কারণ কী?
উত্তর: নাটোর-১ আসনে প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ায় তাইফুল ইসলাম (টিপু) ও ফারজানার আপন ভাই ইয়াছির আরশাদ (রাজন) ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করছেন।
প্রশ্ন ৪: বিক্ষুব্ধ নেতাদের নিয়ে দলের শীর্ষস্থানীয়দের প্রধান উদ্বেগ কী?
উত্তর: দলের নেতাদের প্রধান উদ্বেগ হলো—এলাকায় প্রভাব আছে এমন অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, তাতে বিএনপির ভোট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: ফেনী-২ আসনে আলাল উদ্দিন কীভাবে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান?
উত্তর: ফেনী-২ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত আলাল উদ্দিন (আলাল) মাথায় হ্যাট পরে বিস্তীর্ণ ধানখেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারের ভঙ্গিতে দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য প্রতীকী আবেদন জানান।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কোথায়
- সতর্কবার্তা: ‘আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে’
- আসছে বড় ভূমিকম্প: মহাবিপদের আগাম সতর্কতা দিল আবহাওয়া অফিস
- বাংলাদেশ বনাম ভারত সেমি ফাইনাল: সুপার ওভারে শেষ ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- dhaka division earthquake:‘এটি বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা’
- ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ: ১৩টি এলাকা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে
- ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ; আতঙ্কের মাঝেই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন আজহারী
- ভূমিকম্প: এই সময় করণীয় কি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
- বাংলাদেশ বনাম ভারত সেমি ফাইনাল: খেলাটি সরাসরি দেখুন Live
- আজ ব্রাজিল বনাম মরক্কো কোয়ার্টার ফাইনাল: খেলাটি সরাসরি Live দেখবেন যেভাবে
- চলছে ব্রাজিল বনাম মরক্কো –কোয়ার্টার ফাইনাল: খেলাটি সরাসরি দেখুন Live
- ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস-এর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য রেকর্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- ব্রাজিল ও বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ কবে ও প্রতিপক্ষ কারা
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: বোলিংয়ে ভারত, দেখেনিন স্কোর
- ভূমিকম্পের কবলে মিরপুর টেস্টও, খেলার মধ্যে ঘটলো অবিশ্বাস্য ঘটনা