MD. Razib Ali
Senior Reporter
পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে নতুন নিয়ম
দেশে ই-পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থায় একটি ব্যাপক সংস্কার আনা হচ্ছে। পাসপোর্ট ইস্যু বা নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশি যাচাই প্রক্রিয়া 'কার্যত' স্থগিত হওয়ায়, স্বয়ংক্রিয় ও প্রযুক্তি-নির্ভর উপায়ে আবেদনকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি রোধ করতে সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বায়োমেট্রিক ডেটা সরাসরি পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে একীভূত হবে।
বর্তমানে আবেদনকারীর এনআইডির ছবি স্ক্রিনে দেখানোর একটি প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, এনআইডিতে থাকা আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে আবেদনকারীর চূড়ান্ত পরিচয় যাচাই করার একটি প্রস্তাব এখন নীতিনির্ধারণী মহলে সক্রিয় রয়েছে। এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে, পাসপোর্টপ্রত্যাশীর হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে তা এনআইডির সংরক্ষিত ছাপের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করা যাবে, একই সঙ্গে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যও শনাক্ত করা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বায়োমেট্রিক ম্যাচিং কেন প্রয়োজন?
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়ায় এনআইডি থেকে ডেমোগ্রাফিক তথ্য (যেমন নাম, জন্মতারিখ, বাবা-মায়ের নাম) ইতোমধ্যে ডিজিটাল উপায়ে যাচাই করা হয়। এতে জাল পরিচয় দেওয়ার সুযোগ কিছুটা কমলেও, দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দীর্ঘকাল ধরে শুধুমাত্র ডেমোগ্রাফিক তথ্য মেলানোর পরিবর্তে 'বায়োমেট্রিক ম্যাচিং' (আঙুলের ছাপ ও মুখের ছবি) বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশি যাচাই বন্ধের ফলে পরিচয় নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পূর্বে পুলিশ স্থানীয়ভাবে আবেদনকারীর পরিচয়, বাসস্থান ও পেশা সম্পর্কে খোঁজ নিত। এই পদ্ধতি আর না থাকায়, আবেদনকারী সত্যিকার অর্থে এনআইডিধারী কি না—তা নিশ্চিত করার জন্য এখন প্রযুক্তি-নির্ভর পদ্ধতির প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এনআইডির আঙুলের ছাপ, ছবি এবং বায়োমেট্রিক তথ্যই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস।
যদিও ই-পাসপোর্ট বিভাগ এনরোলিং অফিসারদের মনিটরে এনআইডি-সংরক্ষিত ছবি দেখানোর একটি ফিচার চালু করেছে ('প্রথম স্তরের ভিজ্যুয়াল যাচাই'), প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, বয়স, আলোকসজ্জা, ক্যামেরা গুণগত মান বা শারীরিক পরিবর্তনের কারণে ছবি দেখে মিল যাচাই করা কখনোই শতভাগ নিরাপদ বা নির্ভরযোগ্য হতে পারে না। পরিচয় সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ করতে স্বয়ংক্রিয় বায়োমেট্রিক মিল তাই অপরিহার্য।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) স্পষ্ট জানিয়েছেন, মেশিন-নির্ভর বায়োমেট্রিক যাচাই ছাড়া পাসপোর্ট ব্যবস্থায় পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি সতর্ক করেন, এনআইডি ডাটাবেইস পুরোপুরি কাজে না লাগালে ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট গ্রহণের ঝুঁকি থেকেই যাবে।
নতুন পদ্ধতির কার্যপ্রণালী ও সুবিধা
পরিকল্পিত নতুন নিয়মে, ই-পাসপোর্টের এনরোলমেন্ট কাউন্টারে আবেদনকারীর কাছ থেকে সংগৃহীত আঙুলের ছাপ সরাসরি এনআইডিতে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তুলনা করা হবে। মুখাবয়ব শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও (ফেস ভেরিফিকেশন) একইভাবে এনআইডির ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। যদি কোনো গরমিল ধরা পড়ে, তবে সেই আবেদনটি তৎক্ষণাৎ 'রেড ফ্ল্যাগ' চিহ্নিত হয়ে ম্যানুয়াল যাচাইয়ের জন্য স্থানান্তরিত হবে।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এই পদক্ষেপে দুটি প্রধান সুবিধা অর্জিত হবে: প্রথমত, জাল পরিচয়ে পাসপোর্ট গ্রহণ রোধ হবে; দ্বিতীয়ত, একজন ব্যক্তি বিভিন্ন নামে একাধিক পাসপোর্ট নেওয়ার পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হবে। এর ফলে বাংলাদেশের পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড আরও সুসংহত হবে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা এই উদ্যোগকে 'অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এনআইডি তৈরির সময় যেহেতু পূর্ণাঙ্গ বায়োমেট্রিক যাচাই সম্পন্ন হয়, তাই পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় একই যাচাই বারবার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে পুলিশি যাচাইকে কেন্দ্র করে স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা 'বাণিজ্য' বা উৎকোচের বাজে চর্চা বন্ধ হবে। জোহা নিশ্চিত করেন যে ডেটা শেয়ারিংয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, বরং এটি সরকারের খরচ কমাবে, অপরাধী শনাক্ত করা সহজ হবে এবং জনভোগান্তি দূর হবে।
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ
বায়োমেট্রিক ডেটা অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো ডেটা নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছে। তারা ডেটাবেইজ নিরাপত্তা, ব্যবহারের সীমা এবং অপব্যবহার রোধে শক্তিশালী আইন ও প্রযুক্তি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
তবে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন যে, এই ডাটাবেইস শেয়ারিং হবে সম্পূর্ণ এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং সরকারি নিরাপত্তা প্রোটোকল কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। কোনো তথ্য সংরক্ষণ, বিচ্যুতি বা ট্র্যাকিং করা হবে না—শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক মিল যাচাই করে ফলাফল জানানো হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে পরিচয়ের সমাধান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, পরিচয় যাচাইয়ের কাঠামো থেকে শিশুদের বাদ দিলে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, শিশুদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন হওয়ায়, তাদের ১৩ বা ১৭-সংখ্যার অনলাইন জন্মসনদ নম্বরই হবে মূল পরিচয় শনাক্তকরণ কোড। যেহেতু এই নম্বর অনলাইনে যাচাইযোগ্য, তাই যেকোনো কর্তৃপক্ষ সহজেই শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারবে। জন্মসনদ-ভিত্তিক এই শনাক্তকরণ পদ্ধতি শিশুদের পাসপোর্ট বেহাত হওয়ার আশঙ্কা পুরোপুরি দূর করবে এবং স্বচ্ছতা বাড়াবে।
বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক আস্থা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্ট এবং এনআইডি বিভাগ ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত সংযোগ স্থাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক মিল পরীক্ষা করার প্রস্তাবও রয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে ই-পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকার নিরাপত্তা মূল্যায়নে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বায়োমেট্রিক মিল-ভিত্তিক যাচাই পদ্ধতি ধাপে ধাপে চালু হতে পারে। তিনি উপসংহারে বলেন, নাগরিক নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন এখন আর 'বিকল্প' নয়, এটি একটি 'অপরিহার্য' বিষয় হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকার একটি পরিপত্র জারি করে, যেখানে অনলাইনে যাচাইকৃত জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের ভিত্তিতে নতুন পাসপোর্টের আবেদনকারীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট দেওয়ার বিধান শিথিল করা হয়।
প্রায়শ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ Schema)
প্রশ্ন ১: ই-পাসপোর্ট যাচাইয়ে নতুন কী পদ্ধতি আসছে?
উত্তর: ই-পাসপোর্ট যাচাইয়ে এখন জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আঙুলের ছাপ ও ছবি পাসপোর্টের বায়োমেট্রিক তথ্যের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিলিয়ে দেখা হবে।
প্রশ্ন ২: কেন এই বায়োমেট্রিক যাচাই পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে?
উত্তর: পুলিশি যাচাই প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ হওয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং জাল বা ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট তৈরি পুরোপুরি ঠেকাতে সরকার এই পদ্ধতি চালু করছে।
প্রশ্ন ৩: নতুন নিয়মে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশুদের পাসপোর্ট কীভাবে যাচাই হবে?
উত্তর: শিশুদের ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা বায়োমেট্রিক তথ্যের পরিবর্তে ১৩ বা ১৭-সংখ্যার অনলাইন জন্মসনদ নম্বর ব্যবহার করে তাদের পরিচয় যাচাই ও নিশ্চিত করা হবে।
প্রশ্ন ৪: নতুন বায়োমেট্রিক যাচাই পদ্ধতি কবে থেকে চালু হতে পারে?
উত্তর: সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বায়োমেট্রিক মিল–ভিত্তিক যাচাই পদ্ধতি ধাপে ধাপে চালু হতে পারে। বর্তমানে পাইলট প্রকল্পের প্রস্তুতি চলছে।
প্রশ্ন ৫: এই প্রক্রিয়ায় ডেটা বা তথ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে কি না?
উত্তর: সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডাটাবেইস শেয়ারিং হবে সম্পূর্ণ এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং শুধু তাৎক্ষণিক মিল দেখে ফলাফল জানানো হবে, কোনো তথ্য সংরক্ষণ বা ট্র্যাকিং করা হবে না।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: খেলাটি সরাসরি দেখুন Live
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: সুপার ওভারে শেষ ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- আজ বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: কখন, কোথায় ও কিভাবে দেখবেন লাইভ
- আজ বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: খেলাটি লাইভ দেখার উপায় ও সময়সূচি
- ১১৭ ব্রোকারেজ হাউস শাখা বন্ধ, পুঁজি হারাতে বসেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা
- আজকের সোনার দাম:(রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫)
- আজ বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: খেলাটি সরাসরি Live দেখবেন যেভাবে
- ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ বিপজ্জনক 'জোন-১'-এ সিলেট-ময়মনসিংহসহ ১৯ অঞ্চল
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: বোলিংয়ে ভারত, দেখেনিন স্কোর
- earthquake now-ভূমিকম্প: চরম ঝুঁকিতে রাজধানী ঢাকা, বিশেষজ্ঞদের জরুরি বার্তা
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: খেলাটি সরাসরি Live দেখুন
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: ৪ উইকেটে ৫৪, সরাসরি দেখুন Live
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ফাইনাল: ম্যাচ সেরা ও টুর্ণামেন্ট সেরা হলেন যে ক্রিকেটার
- earthquake: ৯ মাত্রার মহা-ভূমিকম্পের শঙ্কা! ঢাকা-নরসিংদী নিয়ে চরম সতর্কতা
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান: টস শেষ, খেলাটি সরাসরি দেখুন Live