ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

“আমার সোনার বাংলা, কবে যাব বাংলাদেশ”

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২১ অক্টোবর ৩০ ১৫:২৩:০৬
“আমার সোনার বাংলা, কবে যাব বাংলাদেশ”

কঠোর নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে গ্যালারিতে আমরা। আরব আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসী ভাইদের ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ চিৎকারে এই স্টেডিয়াম ততক্ষণে আমাদের হোম গ্রাউন্ড মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের রূপ ধারণ করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গুটিকয়েক সমর্থকের সামনে পুরো গ্যালারিতে তখন বাংলাদেশের আধিপত্য। কিছুক্ষণ পরই স্টেডিয়ামের লাউড স্পিকারে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠলো- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

পুরো স্টেডিয়ামে যখন জাতীয় সঙ্গীতের সুরের মূর্ছনায় ঢেকে আছে মুগ্ধতার চাদরে, তখন হঠাৎ করে পাশ থেকে একটা প্রচন্ড আবেগমিশ্রিত কন্ঠ আমার কানে ভেসে উঠলো- ‘আমার সোনার বাংলা, কবে যাব বাংলাদেশ।’

সেই কণ্ঠের মানুষটাকে পেলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে তার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। অনর্গল বলে গেলেন, ‘নাম সাইফুল, কুমিল্লায় বাড়ি। প্রায় আড়াই বছর আগে ইউএইতে আসি। একটা চাকরী করি শারজায়, এখন পর্যন্ত দেশে যেতে পারিনি। আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় পাঁচ-ছয়জন বন্ধু মিলে খেলা দেখতে এসেছি। বাংলাদেশের কথা খুব মনে পড়ে ভাই, সাথে পরিবারের কথা। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় অটো মুখ থেকে বের হয়ে গেছে- কবে যাবো বাংলাদেশ।’

প্রিয় ক্রিকেটার কে, আমি জানতে চাইলাম। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, সাকিব আল হাসান। ছেলেটার প্রতি এক অদ্ভূত ভালোবাসা অনুভব করলাম। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে প্রায় ৪৮.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে, তাতে এই সাইফুল ভাইয়েরও ছোট্ট অবদান আছে।

এরপর থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যত উইকেট পড়েছে, আমি সাইফুলের সাথে হাইফাইভ করেছি। আন্দ্রে রাসেলের অদ্ভুতুড়ে আউটের পর পুরো স্টেডিয়াম ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ চিৎকারে মুখরিত। বাউন্ডারি লাইনে মুশফিক ফিল্ডিং করতে আসলে এক দুষ্টু দর্শক ‘এই আয়না ভাই’ বলে ডাক দিলে আশপাশের বাকি দর্শকরা তাকে এমনভাবে শাসাল, ভাইটি ভয়ে তখন চুপসে গেছেন। তাসকিন ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে যখন বাউন্ডারি লাইনে আসলেন, তখন আমাদের গ্যালারিতে একটাই আওয়াজ, ‘তাসকিন তাসকিন’।

সবাইকে অবাক ক রে তাসকিন গ্যালারির দিকে তাকিয়ে দুই হাত তুলে মোনাজাতের ভঙ্গি করে দর্শকদের আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বললেন। শেষদিকে খেই হারিয়ে মেহেদী এবং মুস্তাফিজের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশকে।

‘সাইফুল, কি মনে হচ্ছে আপনার?’ আমার প্রশ্নের উত্তরে উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন, ‘ভাই আজ বাংলাদেশ জিতবেই। টেনশন নিয়েন না।’

টেনশন বাড়ালেন সাকিব, দলীয় ২১ রানে আউট হয়ে। তারপর ম্যাচ যখন প্রায় আমাদের হাতে চলে এসেছে তখন মুশফিকের সেই আত্মঘাতী রিভার্স সুইপ। এবার গ্যালারিতে শুনশান নিরবতা, এমনকি দর্শকরাও অবিশ্বাস নিয়ে মুশফিকের প্যাভিলিয়নের দিকে যাওয়া দেখছেন।

কিছুতেই এই সময়ে এভাবে আউট হওয়া মেনে নিতে পারছেন না। এরপর লিটনের ক্যাচটা যখন বাউন্ডারি লাইনে হোল্ডার ধরে ফেললেন, তখন, তখন আর কারোরই মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। কেউ কেউ মাথায় হাত দিয়ে মুখ নিচু করে বসে ছিলেন। আন্দ্রে রাসেল যখন ইনিংসের শেষ বলটা করে সতীর্থদের নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলেন, শারজার গ্যালারিতে তখন রাজ্যের হতাশা, অবিশ্বাস আমাদের চোখে-মুখে।

সাইফুলের মলিন মুখ। চোখ টলমল করে। হয়তো এখনই কেঁদে ফেলবেন। আমার ভেতরটাও ক্ষতবিক্ষত হয়। আমি আর ওর দিকে তাকাতে পারি না। চোখ ভিজে আসে আমার!

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ