বাংলাদেশের এমন এক অবহেলিত ক্রিকেটার যার খেলার চেয়ে না খেলা নিয়ে বেশি আলোচনা হয়

সে নিজেকে দুর্ভাগা মনে করলেও সে হয়তো ভাগ্যবান। কারণ এত কিছুর পরও তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। অবশেষে ২০২১ সালের নভেম্বরে নিজ শহর চট্টগ্রামের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামেন এই ব্যাটসম্যান।
কিন্তু এখানেও বিধিবাম। চোটের কারণে ইয়াসির পুরো ম্যাচ খেলতে পারেননি। মাথায় বল লাগার কারণে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত তার দৃঢ়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। সে ম্যাচে ৪৯ রানের মাথায় চার জন বাংলাদেশি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। বিপরীতে ইয়াসির আলি টিকেছিলেন ৭২ বল, করেছিলেন ৩৬ রান।
ধারাভাষ্যকাররা যখন তাকে নিয়ে আশা দেখা শুরু করেন তখনই ২০২১ সালের বর্ষসেরা ক্রিকেটার শাহীন শাহ আফ্রিদির বল মাথায় লাগে রাব্বির এবং তিনি মাঠ ছাড়েন, নামতে হয় বদলি ক্রিকেটারকে।
এরপর সদ্যই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ দলের একমাত্র টেস্ট সিরিজ ড্র, একমাত্র টেস্ট ম্যাচ জয়ের সাক্ষী হয়েছেন ইয়াসির আলী রাব্বি, এক মাস আগেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকও তুলে নেন তিনি।
ছোট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত বলার মতো বিষয় এটাই যে ইয়াসির আলী রাব্বি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে কাটিয়েছেন। একেক সময় একেক দেশে, একেক ফরম্যাটে তিনি কেবলই অপেক্ষা করেছেন জাতীয় দলের হয়ে খেলার। কিন্তু তিনি হতাশ হননি কিংবা হতাশা প্রকাশ করেননি।
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের সাথে সাজঘর শেয়ার করতে পেরে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন এর আগেও। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে রাব্বি বলেন কেবল পারফর্ম করে যাওয়াই তার কাজ। বাকিটা নির্ভর করে ম্যানেজমেন্টের ওপর।
রাব্বির মতে, আমি যেখানে আছি বা ছিলাম সেখানে আসা তো অনেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন। কয়জন ক্রিকেটার একটা দেশের সর্বোচ্চ লেভেলে সুযোগ পান?
এই ধরনের ক্রিকেটার যারা দীর্ঘ সময় স্কোয়াডে থেকেও একাদশে সুযোগ পাননি এমন তালিকায় অবশ্য ইয়াসির আলী রাব্বি বেশ সফল সঙ্গী খুঁজে পাবেন, তবে তারা সবাই ছিলেন বিশ্বের সফলতম ক্রিকেট দলগুলোর সফলতম স্কোয়াডে- যেমন স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, দীর্ঘসময় শেন ওয়ার্নের মানের বোলারের কারণে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে সুযোগ পাননি।
পাকিস্তানের ২০০০-১০ সালের মিডল অর্ডারে অনেক সময়ই সুযোগ হতো না মিসবাহ উল হকের, কিন্তু তিনি স্কোয়াডে ছিলেন অনেক সিরিজের। সাকলাইন মোশতাকের মতো বোলারের সব ফরম্যাটে, সব দেশে সফলতার কারণে দীর্ঘদিন একাদশের বাইরে সময় কাটিয়েছেন সাইদ আজমল।
রাব্বির কথায় সত্যতা রয়েছে ঠিক, তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ ফরম্যাটের ক্রিকেটে পারফর্ম করেও দলে সুযোগ না পাওয়াটা অবাকই করে।
যেখানে দলগতভাবেই টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত টেস্ট ব্যর্থ সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে টানা ১০ ইনিংস ২৫০ রানও স্পর্শ করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, আফগানিস্তানের সাথে ঘরের মাটিতে টেস্ট হেরেছে, এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইয়াসির আলী রাব্বির গড় ৫০ ছুঁইছুঁই। খেলেন মিডল অর্ডারে, কিন্তু কাঙ্খিত ডাক তিনি পেয়েছেন দলে ডাক পাওয়ার একত্রিশ মাস পর। এ বিষয়ে খুব বেশি আক্ষেপ করতে রাজি নন এই ব্যাটসম্যান। তিনি বলেন, আমি এসব নিয়ে খুব বেশি ভাবি না। আমাকে যখন যেখানে যেভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই কাজটাই আমার করার দরকার।
টেস্ট ফরম্যাটের ক্রিকেট খেলে নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরেই রাব্বি যোগ দিলেন খুলনা টাইগার্সের সাথে, শুরু হলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ টি-২০ আসর। চলতি আসরে বাংলাদেশে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যারা বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন তাদের মধ্যে ষষ্ঠ ইয়াসির আলী রাব্বির।
খুলনা টাইগার্সের হয়ে খেলা এই ব্যাটসম্যানের বিশেষত্ব হলো, বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চলতি বিপিএলে তার স্কোরিং রেট দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ স্কোরিং রেট মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৩৯.৫৬ আর রাব্বির ১৩৮.০৫।
রাব্বির প্রথম ডাক পাওয়ার স্মৃতি মনে করে বলেন, আমি যখন প্রথম ডাক পাই তখনও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেই আমি সুযোগ পাই।
২০১৯ সালে জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর করা বিপিএলের সেরা একাদশেও জায়গা করে নেন ইয়াসির আলী রাব্বি। তিনি বাংলাদেশের সেইসব ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন যিনি দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বিবেচনায় আছেন। তবে তিনি খেলার চেয়ে না খেলার জন্যই বেশি আলোচনায় ছিলেন।
ইয়াসির আলী রাব্বির মতে এই সময়টা তার জন্য আশীবার্দস্বরূপ ছিল। তার মতে কিছু জায়গায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, এক নেইল ম্যাকেঞ্জির মতো কোচের সাথে কাজ করতে পেরেছি, তিনি আমার টেকনিকে অনেক উন্নতি করে দিয়েছেন। একই সাথে ফিটনেসের কথাও বলতেই হবে জাতীয় দলের রাডারে আসার পর ফিটনেস নিয়ে আমার অনেক কাজ হয়েছে।
এরপর তিনি বলেন, জাতীয় দলের হয়ে কিছু করতে পারা সবসময়ই একটা বড় ব্যাপার। সেখানে টেস্ট কি টি-২০ এটা ভাবার সময় থাকে না। যখন যে ফরম্যাট থাকে সেই ফরম্যাট অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেই। অনুশীলনের সময় কেবল পরে কোন ফরম্যাটে খেলা সেটা ভাবি এবং সে অনুযায়ী অনুশীলন করি।
তবে ইয়াসির আলী রাব্বি টেস্ট ফরম্যাটটাকেই বেশি পছন্দ করেন বলেছেন বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে। ২০১২ সাল থেকে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে আছেন তিনি। সেদিক থেকে দীর্ঘদিন ক্রিকেটের আবহের সাথে তার পরিচয়।
আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শেহজাদ কিংবা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম উল হকের মতো তুলনামূলক ভারি হওয়ায় ইয়াসির আলীকে ফিটনেস নিয়ে বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই আসলে কোচরা বলতেন, এটা করতে হবে ওটা করতে হবে। এসবে কখনোই মন খারাপ হয়নি। কারণ এটা তারা আমার ভালোর জন্যই বলতেন। আমার সবসময় মনে হয়েছে ফিটনেস নিয়ে কাজ করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় ক্রিকেট লিগে এরই মধ্যে নয়টি সেঞ্চুরি করেছেন ইয়াসির আলী। একই সাথে টি-২০ ঘরোয়া লিগগুলোতে ৮টি ফিফটি করেছেন তিনি, যেখানে হাঁকিয়েছেন ৫৩টি ছক্কা।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- দেশের রাজনীতি নতুন মোড়: সেনাপ্রধানের শঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে
- জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি অনড়, সত্যি হতে চলেছে সেনা প্রধানের ভবিষ্যদ্বাণী
- শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম পার্থ স্কর্চার্সের মধ্যকার ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- বিক্রেতা সংকট: সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি পেয়ে হল্টেড ৮ কোম্পানি
- রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো নিয়ে তোলপাড়, নীরব বিদায়ের ইঙ্গিত?
- চমক দেখালো ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ার
- বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে ৮ কোম্পানির শেয়ার
- আজকের সকল দেশের টাকার রেট(১৮ আগস্ট ২০২৫)
- বিক্রেতা সংকটে হল্ডেট ৩ কোম্পানি
- উপদেষ্টা আসিফের বাবা বিল্লাল মাস্টারকে গ্রেপ্তার করা হোক, সবকিছু বেরিয়ে যাবে
- ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারে চমক
- ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধনে যুগান্তকারী পরিবর্তন, বয়সেও আসছে ছাড়
- আজ বাংলাদেশে ১৮, ২১ ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার মূল্য
- সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ: বাংলাদেশের ম্যাচ কবে কখন কোথায় ও লাইভ দেখার উপায়
- দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ: প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মানতে হবে যেসব শর্ত