ঢাকা, শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২

নব্বই দশকের ক্রিকেটে আটকে আছে পাকিস্তান টিম মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৩ অক্টোবর ০৫ ১৫:১১:৫৯
নব্বই দশকের ক্রিকেটে আটকে আছে পাকিস্তান টিম মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের

সময় বদলেছে। ক্রিকেটেও পরিবর্তন এসেছে। খেলা বদলে গেছে। এখন প্যাডেল সুইপ, রিভার্স সুইপ টেস্টে জো রুটের মতো ব্যাটসম্যানদের 'গো টু শট' হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পরিবর্তনের এই হাওয়ায় পাকিস্তান দল কতটা বদলেছে? খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফরা পরিবর্তনের কথা বলছেন না, কৌশলের কথা বলছেন?

তারপরও ইনিংসের শেষ দিকে হাত খুললেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। তাই ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় বারবার প্রশ্ন উঠছে। পাকিস্তান কেন নব্বইয়ের দশকে ক্রিকেট খেলছে? মানে, পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কেন ঝুঁকি ছাড়াই ইনিংস বাড়াতে এবং শেষে দ্রুত রান পাওয়ার চেষ্টা করছেন?

আপনি বলতে পারেন যে পাকিস্তান দল এভাবে খেলে এবং ওয়ানডেতে আশ্চর্যজনকভাবে ধারাবাহিক! আইসিসি ওডিআই র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয়। কেন হঠাৎ এমন দলকে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে? কারণটা সহজ, এবারের বিশ্বকাপে বন্যা হতে পারে। কয়েকদিন আগে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিসিসিআইয়ের প্রধান কিউরেটর আশীষ ভৌমিক বলেছিলেন, তারা চান বিশ্বকাপের ১০টি ভেন্যুতে রান উৎসব অনুষ্ঠিত হোক। দুই ইনিংসে ৩০০ রানই বিশ্বকাপের উইকেটের রেসিপি। আর দুই প্রস্তুতি ম্যাচেও হয়তো তার আভাস পেয়েছে পাকিস্তান। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪৫ রান করেও হেরে যায় পাকিস্তান। পরের ওভারে অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৫১ রান টপকে যেতে পারেনি পাকিস্তান।

পাকিস্তান কেন পুরনো কৌশল নিয়ে ক্রিকেট খেলছে সেই প্রশ্নে ফিরে যাওয়া যাক। ক্রিকেটাররা কি কারণ লুকাতে পারবেন? এটা একটা বড় কারণ। এমনই বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানের খেলার ধরন। নিয়মিত দৌড়ালেও শুরুতে কিছুটা সময় নিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পাকিস্তানের টপ অর্ডারে ফখর জামানই একমাত্র যিনি শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারেন। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে, ফখরই একমাত্র যার স্ট্রাইক রেট ৯০ এর উপরে (৯১.৯৬)। বাবরের স্ট্রাইক রেট ৮৯. রিজওয়ানের ৮৮।

স্ট্রাইক রেট খুব একটা আলাদা বলে মনে না হলেও শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছেন ফখর। কিন্তু এই ফখর আছেন ফাইনাল অফ ফর্মে। গত এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮০ রানের ইনিংসের পর ১০ ইনিংসে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩৩। তাই ফখর আদৌ একাদশে থাকবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শেষ ১০ ওভারে, প্রত্যেকেরই ছক্কা-সাতে দ্রুত রান করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে তাদের কেউই শহীদ আফ্রিদি বা আবদুল রাজ্জাকের মতো ভয়ঙ্কর নয়।

এই পরিসংখ্যানেই ধরা পড়বে অন্য টপ ফেভারিট দলের সঙ্গে পাকিস্তানের পার্থক্য। ফখরের স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯২, তাকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার বলা হয়, যেখানে ভারতের শুভমান গিলের স্ট্রাইক রেট ১০২.৮ ইংল্যান্ডের ওপেনার বেয়ারস্টো ১০৩.৯। এমনকি ইংল্যান্ড দলের অ্যাঙ্করিং করা ডেভিড মালানেরও স্ট্রাইক রেট ৯৬। আর ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ঘোষণা দিয়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছেন।

এই সমস্যা সত্ত্বেও ওয়ানডেতে শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে পাকিস্তান কীভাবে? কারণ, বোলারদের অবদান। বাবররা খুব বেশি রান না করেও নিয়মিত জিতেছিল, এর বড় কারণ ছিল তাদের বোলাররা। শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ ও হারিস রউফ শুরু থেকেই বিপক্ষ দলকে কাঁপিয়ে দিতেন। তাহলে প্রতিপক্ষের জন্য বড় টার্গেট হতো ২৭০-২৮০ রান। তবে নাসিমের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ায় কিছুটা সমস্যায় পড়েছে পাকিস্তান। কারণ, নতুন বল দুই দিকেই সুইং করতে পারেন এমন এই বোলার হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের প্রধান বোলার।

আর আফ্রিদি নতুন বলে উইকেট নিতে পারলে চাপে পড়বে বাবরের দল। প্রতি ম্যাচেই কি উইকেট নেওয়া সম্ভব? পেসাররা ব্যর্থ হলে স্পিনাররা এসে উইকেট নিয়ে যাবে, পাকিস্তানি স্পিনারদের কাছ থেকে এমনটা আশা করা কঠিন। কারণ শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ ও উসামা মীরের স্পিন আক্রমণ বিশ্বমানের নয়। আগের প্রজন্মের স্পিনার সাকলাইন মুশতাক, সাঈদ আজমল এবং শহীদ আফ্রিদির তুলনায় তারা কিছুই নয়। ৬৪ ওয়ানডেতে ৮৩ উইকেট নেওয়া শাদাব শেষ ৪ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ২ উইকেট। নেওয়াজ, উসমারাও এই সংস্করণে তেমন অভিজ্ঞ নন।

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অভাব রয়েছে। এই দলে একমাত্র বাবর আজমই ১০০ টির বেশি ওয়ানডে খেলেছেন। তবে এই দলে এমন কেউ নেই যে ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে।দেয়ালে পিঠ ঠেকলে বাঘ যেমন গর্জন করে, পাকিস্তানও তেমনি। ভক্তরা সম্ভবত সেই গর্জন শোনার অপেক্ষায়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ