ঢাকা, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

পুঁজিবাজারে দুর্নীতি! রাশেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ৩০ ২০:২৫:৩৮
পুঁজিবাজারে দুর্নীতি! রাশেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে টানা দরপতন, বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত। দিনকে দিন কমছে পুঁজি, ভরসা হারাচ্ছেন হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। এর মাঝেই বিস্ফোরক অভিযোগ—বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)–এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম (রাশেদ) ও কমিশনের কয়েক সদস্য আইন লঙ্ঘন করে দুর্নীতিতে জড়িত হয়েছেন।

এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, এই দুর্নীতির ফলেই দেশের পুঁজিবাজার আজ ভেঙে পড়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ: “আমাদের অর্থ দিয়ে লুটপাট হয়েছে”

বিভিন্ন বিনিয়োগকারী সংগঠনের নেতৃত্বে কয়েকশ বিনিয়োগকারী সম্প্রতি রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন—

“শেয়ারবাজার আজ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ বাঁচার জন্য বিনিয়োগ করে, কিন্তু এখানে রীতিমতো ছিনতাই চলছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় দায় কমিশনের নেতৃত্বের।”

তারা অভিযোগ করেন—

অযোগ্য, লোকসানি ও শেল কোম্পানিগুলোকে অযৌক্তিকভাবে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কমিশনের অনুমোদনে কিছু চিহ্নিত গ্রুপ কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীকে ঠকিয়েছে।

কমিশনের সদস্যদের কেউ কেউ এসব দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত অভিযোগ ও দুদকে তদন্তের দাবি

এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা রাষ্ট্রপতির বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, যাতে বিএসইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)-এও জমা দেওয়া হয়েছে লিখিত অভিযোগ।

বিনিয়োগকারীদের দাবি:

বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও কমিশনের সব সদস্যকে অপসারণ ও তদন্তের আওতায় আনা হোক

পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো গড়ে তোলা হোক

তদন্তে প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

বিএসইসি কী বলছে?

বিএসইসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো বক্তব্য আসেনি। তবে কমিশনের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন:

“অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চেয়ারম্যান পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।”

তবে এই বক্তব্য বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারেনি। বরং অনেকেই বলছেন,

“যারা আমাদের সর্বনাশ করেছে, তাদের মুখে এ ধরনের ভাষণ আর শুনতে চাই না।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত: “এই নেতৃত্বে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে না”

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বারবার একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করে যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি মারাত্মক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন:

“যতদিন পর্যন্ত দুর্নীতির সংস্কৃতি দূর না হবে, ততদিন পর্যন্ত বাজারে আস্থা ফিরবে না। আর আস্থা ছাড়া কোনো পুঁজিবাজার টিকতে পারে না।”

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি: আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা, অসহায়তা

চলতি এপ্রিল মাসেই ডিএসইর সূচক প্রায় ৩০০ পয়েন্টের বেশি কমেছে

শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দর লগইন মূল্য থেকে ৫০%-৭০% কমে গেছে

লাখো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কোনো রিটার্ন তো দূরের কথা, মূলধন হারিয়ে ফেলেছেন

অবস্থা এমন যে অনেকেই জীবনের শেষ সঞ্চয় হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

ভবিষ্যৎ করণীয় কী?

কমিশনের শুদ্ধি অভিযান

সঠিক কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেওয়া

কারসাজিকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা

বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা বাস্তবায়ন

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে হলে শুধু মুখের কথা নয়, কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদের হাতে বাজার আজ বিপন্ন, তাদের দায়ী না করলে বিনিয়োগকারীরা আর ফিরে আসবে না—আর ফিরে না এলে বাজারও ফিরবে না।

রাজিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ