ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

পর্দার আড়ালে নতুন খেলা: শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জন

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৯ ২৩:০০:১৩
পর্দার আড়ালে নতুন খেলা: শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও শুরু হয়েছে রহস্যময় গুঞ্জন। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকলেও, পর্দার আড়ালে নাকি চলছে এক ভিন্ন খেলা—ক্ষমতাচ্যুত ও কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নতুন নামে, নতুন প্রতীকে এবং নতুন মুখে ফেরার ছক কষছে। এর নেপথ্যে ভারতের সমর্থন এবং দিল্লিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা জোরালো হয়েছে।

পতন থেকে নতুন পরিকল্পনা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং তাদের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ বাতিল করে। শীর্ষ নেতারা কেউ কারাগারে, কেউ বিদেশে পলাতক—এমন অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছিল।

কিন্তু রাজনৈতিক মহলের দাবি, আওয়ামী লীগ সরাসরি নিজেদের নামে প্রার্থী না দিয়ে স্বতন্ত্র বা নতুন কোনো দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আইনি বাধা এড়িয়ে এবং ভোটারদের সামনে নতুন চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গোপন প্রশিক্ষণ ও পুরনো মুখের ছদ্মবেশ

ঢাকার গুলশান, বনানী ও মিরপুরের কিছু গোপন স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনী প্রচারণা, অর্থায়ন ও ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের কৌশল শেখানো হচ্ছে তাদের। অনেকেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা মূল দলের সাবেক নেতা-কর্মী, যারা এখন স্বতন্ত্র পরিচয়ে আসতে প্রস্তুত।

২০২৪ সালের নির্বাচনে দলটির পক্ষ থেকে নিজেদের প্রার্থীর বিপরীতে তথাকথিত ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী দাঁড় করানোর নজির ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এবারও একই কৌশল ব্যবহার করা হতে পারে, তবে আরও সুসংগঠিতভাবে।

সম্প্রতি একজন সেনা কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে, যিনি নাকি আওয়ামী লীগের কর্মীদের গোপন প্রশিক্ষণে যুক্ত ছিলেন। এই ঘটনা গুঞ্জনকে আরও তীব্র করেছে।

ভারতের ছায়া ও শেখ হাসিনার ভূমিকায় জল্পনা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পরিকল্পনার পেছনে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে দলের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করছেন এবং বিদেশি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দলীয় অর্থ লেনদেন ও প্রভাব বিস্তারের জন্য বিদেশভিত্তিক নেটওয়ার্কও সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভোটারদের সংশয় ও নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ

নতুন মুখে আসা প্রার্থীদের পেছনে পুরনো ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী লুকিয়ে আছে কিনা, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। মিরপুরের বাসিন্দা এক ভোটার বলেন, "নতুন নামের আড়ালে পুরনো খেলা হলে ভোটাররা কি সত্যিই নতুন কিছু পাবেন?"

নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রার্থী হিসেবে যে কেউ দাঁড়াতে পারেন, তবে রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে নির্বাচনী সুযোগের অপব্যবহার ঠেকানো কঠিন হবে। প্রার্থীর অতীত সংযোগ ও অর্থের উৎস যাচাই করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

২০২৪ সালের পতনের পর অনেকেই মনে করেছিলেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অধ্যায় শেষ। কিন্তু পর্দার আড়ালের এই তৎপরতা প্রমাণ করছে—বাংলাদেশের রাজনীতি আবারও চমকের দিকে এগোচ্ছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এই রহস্যের পর্দা কি উন্মোচিত হবে, নাকি খেলা চলবে পর্দার আড়ালেই? উত্তর দেবে সময়।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ