ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে ধস: এই বড়সড় পতনের মূল হোতা তিন বহুজাতিক কোম্পানি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৫ ১৮:৪৮:০০
শেয়ারবাজারে ধস: এই বড়সড় পতনের মূল হোতা তিন বহুজাতিক কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে—সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস। কিন্তু দেশের শেয়ারবাজার যেন হঠাৎই ছুটে চলেছে উল্টো পথে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কাকে সত্যি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৪.৫৮ পয়েন্ট পড়ে গিয়ে নেমে এসেছে ৪,৭৮১ পয়েন্টে, যা সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আজকের এই বড়সড় পতনের মূল হোতা তিন বহুজাতিক কোম্পানি—ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটা।

এই তিন বিদেশি জায়ান্ট যেন একসঙ্গে হাত মিলিয়ে বাজারের আকাশে কালো মেঘ ডেকে এনেছে। সূচকের পতনে তাদের প্রভাব ছিল এতটাই গভীর যে, সামগ্রিক বাজারের চাপের চেয়ে তারা নিজেরাই হয়ে উঠেছে ‘ধসের রূপকার’।

সূচকের ঘাড়ে বোঝা চাপাল যারা

প্রথম অভিযুক্ত, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি)—একাই সূচক থেকে কেটে নিয়েছে ৫.৫৩ পয়েন্ট। আজ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ২.২১ শতাংশ।

পরের অবস্থানে গ্রামীণফোন, দেশের মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান চালিকাশক্তি হলেও আজ তাদের শেয়ারদাম পড়ে গেছে ০.৬৭ শতাংশ, সূচক থেকে কেটে নিয়েছে ৪.৩২ পয়েন্ট। সম্প্রতি কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মাঝে যে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে, সেটিই আজকের পতনের অন্যতম কারণ।

তৃতীয় নাম রবি আজিয়াটা। কয়েক দিন ধরেই ধারাবাহিক দরপতনে রয়েছে কোম্পানিটি, আর আজও সেই ধারা অব্যাহত রেখে সূচক থেকে সরিয়ে দিয়েছে ২.৫১ পয়েন্ট। অথচ, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা ও লভ্যাংশ দিয়ে বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছিল।

শুধু তিনজন নয়, আরও ছিল সঙ্গী

বাজারের অন্ধকারে শুধু এই তিন বিদেশি কোম্পানি নয়, আজ লাফার্জহোলসিম ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট-এর মতো আরও দুই বহুজাতিক কোম্পানি মিলে যেন যোগ দিয়েছে পতনের মিছিলেও। বড় মূলধনী এসব কোম্পানির শেয়ারদাম যখন পড়ে, তখন সূচকের ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

বিনিয়োগকারীদের মনস্তাপে ছায়া

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন শেয়ারবাজারে আতঙ্কের মেঘ ঘন হয়ে উঠেছে। সূচক হারিয়েছে তার সহ্যসীমা, আর বিনিয়োগকারীরা হারাচ্ছেন আস্থা। তারা মনে করছেন, কেবল বাজারসংশ্লিষ্ট খাতগুলোর পারফরম্যান্স নয়—বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা, নীতিগত স্থিরতা ও বাজার মনোভাব বোঝার অভাবও এমন পতনের নেপথ্যে কাজ করছে।

পরিণতি কী?

আজকের বাজার পতন কেবল একটি দিনের গল্প নয়—এ যেন দীর্ঘমেয়াদি অবহেলার ফল। আর্থিক প্রতিবেদন, কোম্পানির স্বচ্ছতা, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা—সব কিছুর সমন্বয় ছাড়া এমন ঝুঁকিপূর্ণ পুঁজিবাজার থেকে স্থিতিশীলতার আশা করাই কঠিন।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন: ১৫ মে তারিখে শেয়ারবাজারে এত বড় পতনের কারণ কী ছিল?

উত্তর: সূচক পতনের মূল কারণ ছিল তিনটি বড় বিদেশি কোম্পানির—ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার শেয়ারদামে উল্লেখযোগ্য হ্রাস।

প্রশ্ন: সূচক কত পয়েন্ট কমেছে?

উত্তর: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৪.৫৮ পয়েন্ট কমে ৪,৭৮১ পয়েন্টে নেমে এসেছে, যা গত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

প্রশ্ন: শুধু তিনটি কোম্পানিই কি পতনের জন্য দায়ী?

উত্তর: প্রধানত ওই তিনটি বহুজাতিক কোম্পানি দায়ী হলেও লাফার্জহোলসিম ও হাইডেলবার্গ সিমেন্টসহ আরও কিছু বিদেশি কোম্পানিও সূচকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রশ্ন: এই পতনের প্রভাব বিনিয়োগকারীদের উপর কেমন পড়বে?

উত্তর: বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে, যা বাজারে আতঙ্ক বাড়াতে পারে এবং ভবিষ্যতের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ