ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিউচুয়াল ফান্ড ও পাবলিক ইস্যুতে নতুন রুলস: পুঁজিবাজারে বড় বদল

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২০ ২৩:৩১:০৯
মিউচুয়াল ফান্ড ও পাবলিক ইস্যুতে নতুন রুলস: পুঁজিবাজারে বড় বদল

বিএসইসির কাছে টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিলো সংস্কার কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে গতিশীল ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মিউচুয়াল ফান্ড এবং পাবলিক ইস্যু সংক্রান্ত রুলসের সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’। সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধান কার্যালয়ে এই চূড়ান্ত সুপারিশমালা আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এই সুপারিশমালা পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে নতুন দিশা প্রদান করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার প্রধান সুপারিশ

সব মেয়াদি (ক্লোজড-এন্ড) ফান্ডকে ট্রাস্ট ডিডে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বাধ্যতামূলক রিডিম (অবসায়ন) করতে হবে। তবে বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) ৭৫% ইউনিটহোল্ডার উপস্থিত থাকলে ফান্ড ওপেন-এন্ডে রূপান্তর করা যাবে।

পূর্বে মেয়াদ বৃদ্ধি করা ফান্ডগুলোর জন্য সংশোধিত বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর ৬ মাসের মধ্যে ইজিএম আহ্বান করে রূপান্তরের বিষয়ে ভোট নিতে হবে। ৭৫% সমর্থন না পেলে ৩ মাসের মধ্যে ফান্ড রিডিম করতে হবে।

গ্রোথ, ব্যালান্সড, শরিয়াহ-অনুবর্তী, ফিক্সড ইনকাম ও মানি মার্কেট ফান্ডের জন্য আলাদা আলাদা বাধ্যতামূলক সম্পদ বরাদ্দ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

বিনিয়োগ সীমাবদ্ধতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে: একক শেয়ারে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ১০% থেকে ১৫% ও একক শিল্প খাতে ২৫% থেকে ৩০% করা হয়েছে।

তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ নিষেধাজ্ঞা থাকবে, তবে মেইন বোর্ডে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির বন্ড বা প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে।

মোট বার্ষিক ব্যয় অনুপাত (টোটাল অ্যানুয়াল এক্সপেন্স রেশিও) সর্বোচ্চ ৩% নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে ফিক্সড ইনকাম ও মানি মার্কেট ফান্ডের জন্য হার ২%।

মেয়াদি ফান্ডের ক্ষেত্রে বছরে অর্জিত লাভের কমপক্ষে ৭০% লভ্যাংশ দিতে হবে ইউনিটহোল্ডারদের। ওপেন-এন্ড বা বেমেয়াদি ফান্ডে লাভের ৩০% লভ্যাংশ প্রদান বাধ্যতামূলক।

পাবলিক ইস্যু রুলস সংক্রান্ত সুপারিশ

আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রথম অনুমোদন প্রদান করবে, এরপর বিএসইসি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

আইপিও নিরীক্ষকের জন্য ‘ফিট এন্ড প্রপার’ মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, যা নিরীক্ষার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াবে।

আইপিও প্রাইসিংয়ের জন্য একটি সুগঠিত মডেল তৈরি করা হয়েছে, যা তালিকাভুক্তিতে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করবে এবং গুণগত কোম্পানির আগ্রহ বাড়াবে।

ইস্যু ম্যানেজারদের দায়দায়িত্ব ও ভূমিকা সুস্পষ্ট করা হয়েছে, যা তাদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে।

কর্পোরেট গভর্নেন্স বা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে সুপারিশমালায় বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় সহায়ক হবে।

বিএসইসি’র পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালামের বরাত দিয়ে জানানো হয়, টাস্কফোর্সের সুপারিশমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

১. মিউচুয়াল ফান্ডের নতুন রুলস কী কী?

নতুন রুলস অনুযায়ী মেয়াদি ফান্ডকে মেয়াদ শেষে অবসায়ন করতে হবে, অথবা বিশেষ সভায় ইউনিটহোল্ডারের ভোটে ওপেন-এন্ড ফান্ডে রূপান্তর সম্ভব হবে। এছাড়া বিনিয়োগ সীমা ও বার্ষিক খরচে পরিবর্তন এসেছে।

২. পাবলিক ইস্যু বা আইপিও প্রক্রিয়ায় কী পরিবর্তন আসছে?

আইপিও অনুমোদনে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাথমিক অনুমোদন নেওয়া হবে এবং বিএসইসির চূড়ান্ত অনুমোদন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বাড়ানো হবে। নিরীক্ষক এবং ইস্যু ম্যানেজারদের ভূমিকা আরও সুসংহত হবে।

৩. এই নতুন রুলসগুলো পুঁজিবাজারের জন্য কী গুরুত্ব বহন করে?

এসব পরিবর্তন পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং বাজারের টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে।

৪. নতুন রুলস বাস্তবায়ন কবে শুরু হবে?

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শীঘ্রই বাস্তবায়ন শুরু হবে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ