ঢাকা, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

জুমার দিনে যে আমলগুলো করলে আল্লাহ পাপ ক্ষমা করেন

২০২৫ জুন ২০ ১০:৫৮:২৫
জুমার দিনে যে আমলগুলো করলে আল্লাহ পাপ ক্ষমা করেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ। তবে সপ্তাহের একটি দিন রয়েছে, যা গুনাহ মাফের জন্য বিশেষভাবে বরকতময়—সেই দিনটি হলো জুমা। ইসলাম ধর্মে জুমার দিনটি শুধু একটি সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং এটি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের এক অপূর্ব উপলক্ষ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—

“হে মুমিনগণ! জুমার দিনে আজান দেওয়া হলে, তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।”

(সূরা জুমা: ৯)

আসুন জেনে নিই, জুমার দিনে কোন আমলগুলো করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন—

১. গোসল ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, পবিত্রতা অর্জন করে, সুগন্ধি ব্যবহার করে, মসজিদে গিয়ে নির্ধারিত নামাজ পড়ে এবং খুতবা চলাকালীন চুপ থাকে—তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”

(সহিহ বুখারি: ৮৮৩)

এই হাদিস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, জুমার গোসল ও যথাযথ প্রস্তুতি গুনাহ মাফের বড় মাধ্যম।

২. আগেভাগে মসজিদে যাওয়া

নবীজি (সা.) বলেন—

“যে ব্যক্তি প্রথম প্রহরে জুমার জন্য মসজিদে যায়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল; এরপর যে যায় সে যেন গরু কোরবানি করল… এভাবে ধীরে ধীরে সওয়াব কমে যায়। ইমাম যখন খুতবা দেন, তখন ফেরেশতারা খুতবা শোনায় মনোযোগ দেয়।”(সহিহ বুখারি: ৮৪১)

প্রথম দিকে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত অপরিসীম। এটি বান্দার নিয়ত ও আন্তরিকতা প্রকাশ করে।

৩. সুরা কাহাফ পাঠ

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন—

“যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য তার জন্য আলো হিসেবে থাকবে।”

(মুসতাদরাক হাকিম: ২/৩৯৯)

এই আমল শুধু গুনাহ মাফ নয়, বরং বান্দাকে দুনিয়ার অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

৪. দোয়ার বিশেষ মুহূর্ত খোঁজা

জুমার দিন রয়েছে এমন একটি মুহূর্ত, যখন বান্দার যেকোনো হালাল দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। নবীজি (সা.) বলেন—

“জুমার দিনে একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তা তাকে দেন… তোমরা এই সময়টি আসরের পর খোঁজো।”

(আবু দাউদ: ১০৪৮)

এই সময়ে দোয়া করার মাধ্যমে বান্দা শুধু গুনাহ মাফই নয়, বরং জীবনের বহু জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

৫. বেশি বেশি দরুদ পাঠ

জুমার দিনের অন্যতম বিশেষ আমল হলো প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ। রাসুল (সা.) বলেন—

“তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। এই দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছায়।”

(আবু দাউদ: ১০৪৭)

দরুদ পাঠের মাধ্যমে যেমন হৃদয় নরম হয়, তেমনি আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের দরজাও খুলে যায়।

৬. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

খুতবা শুনা শুধু সামাজিক রীতি নয়, এটি একটি ইবাদত। নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে বলেন,

“যে খুতবার সময় চুপ থাকে এবং মনোযোগ দিয়ে শোনে, তার গুনাহ মাফ হয়।”

এ কারণে জুমার দিনে খুতবা শোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বান্দার অন্তরকে শুদ্ধ করে ও আল্লাহর রহমতের অধিকারী করে তোলে।

জুমার দিন যেন এক মহাসুযোগ—আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার, গুনাহ ঝরিয়ে ফেলার, ও নতুন করে ফিরে আসার দিন। এই দিনে যদি আমরা সত্যিকারের ইবাদতের মনোভাব নিয়ে কয়েকটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমল করি, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে গুনাহ মাফ হয়ে যেতে পারে।

আসুন, জুমার দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলোকে জীবনের অভ্যাসে পরিণত করি। হতে পারে, এই এক শুক্রবারই বদলে দেবে আমাদের পুরো আখিরাত।

মো: রাজিব আলী/

ট্যাগ: আমল জুমা

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ