ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

গোসলের পর আঙুল কুঁচকে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে যা পেলেন বিজ্ঞানীরা!

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৬:১০:৪০
গোসলের পর আঙুল কুঁচকে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে যা পেলেন বিজ্ঞানীরা!

ছোট্ট এই শারীরিক পরিবর্তনের পেছনে লুকিয়ে আছে স্নায়ু, বিবর্তন ও রোগের ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: গোসলের পর হঠাৎ তাকিয়ে দেখলেন—হাতের আঙুলগুলো কুঁচকে গেছে। সাঁতার কাটার পরেও এমন দেখা যায়। কিন্তু কেন হয় এমন? প্রশ্নটা যতই সাধারণ হোক, বিজ্ঞানীরা যখন এর উত্তর খুঁজতে গিয়েছেন, তখন সামনে এসেছে এক বিস্ময়কর সত্য।

শুধু চামড়া আর পানি নয়—এই ছোট্ট কুঁচকে যাওয়ার পেছনে কাজ করছে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, বিবর্তনের ইতিহাস এবং এমনকি কিছু গুরুতর রোগের ইঙ্গিত।

স্রেফ পানিতে ভেজা নয়, পেছনে স্নায়ু-নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া

প্রথমে মনে করা হতো, পানি ত্বকে ঢুকে কোষে চাপ সৃষ্টি করে এবং ফলস্বরূপ আঙুল কুঁচকে যায়। কিন্তু ১৯৩৫ সালে চিকিৎসকেরা লক্ষ করেন—যেসব রোগীর হাতে ‘মিডিয়ান নার্ভ’ কেটে গেছে, তাদের আঙুল পানিতে ভিজলেও কুঁচকে যায় না।

এর মানে, এই প্রতিক্রিয়া কেবল চামড়ার নয়—এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে স্নায়ুতন্ত্রের।

পরবর্তী গবেষণায় দেখা যায়, পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখলে স্নায়ু রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে। এতে চামড়ার নিচের টিস্যুর আয়তন কমে যায়, আর বাইরের স্তর ঢুকে পড়ে—ফলে দেখা দেয় কুঁচকে যাওয়া রেখা।

বিজ্ঞানীদের কাছে আরও এক বিস্ময়: প্রতিবার একই প্যাটার্ন

আবার দেখা গেছে, আঙুল যতবার কুঁচকে যাক না কেন, সেই রেখার প্যাটার্ন প্রায় এক থাকে। ঠিক যেন আঙুলের নিজস্ব এক রহস্যময় ছাপ!

এমনকি স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কুঁচকে যাওয়া হতে পারে আমাদের জিনগত বিবর্তনের অংশ। পানির ভেতরে বস্তু ধরতে বা আটকে থাকা ঠেকাতে ঘর্ষণ বাড়ানোর জন্যই সম্ভবত এমন পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের শরীরে।

রোগেরও ইঙ্গিত দেয় এই কুঁচকে যাওয়া?

বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, আঙুল কুঁচকে যাওয়ার ধরনে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তা হতে পারে টাইপ-টু ডায়াবেটিস, স্নায়বিক সমস্যা, হৃদ্‌রোগ বা সিস্টিক ফাইব্রোসিসের প্রাথমিক লক্ষণ।

২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পারকিনসনস রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও এক হাতে বেশি কুঁচকে যাওয়া দেখা দিতে পারে।

মজার তথ্য: লবণপানিতে কুঁচকায় ধীরে, পুরুষদের আঙুল কুঁচকায় বেশি

বিজ্ঞানীরা বলছেন, লবণপানিতে আঙুল তুলনামূলক কম কুঁচকে যায়। কারণ, শরীর ও পানির লবণের ভারসাম্যে কম পার্থক্য থাকে।

আরও মজার তথ্য হলো—পুরুষদের আঙুল নারীদের তুলনায় একটু দ্রুত কুঁচকে যায়। কেন? সে প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজছেন গবেষকরা।

কুঁচকে যাওয়া আঙুলের উপকারিতাও আছে

লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামে পরিচালিত এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা ভিজে আঙুলে কিছু ধরেন, তারা বেশি শক্তি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু কুঁচকে আঙুলে ঘর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় কম চাপেই বস্তু ধরা যায়—যা দীর্ঘ সময় কাজ করতেও সহায়ক।

এই ছোট্ট কুঁচকে যাওয়া শুধু পানির খেলা নয়—এ এক স্নায়ুতন্ত্র-চালিত সংকেত, যা বলছে: “দেহ সচেতন, প্রস্তুত, সাড়া দিচ্ছে”।

একদিকে এটি মানব দেহের অভিযোজনের স্মারক, অন্যদিকে হতে পারে রোগের প্রথম লক্ষণ। বিজ্ঞানীরা এখনও সব উত্তর জানেন না। তবে একজিনিস নিশ্চিত—আঙুল কুঁচকে যাওয়া নিয়ে আমরা আর আগের মতো অবহেলা করতে পারি না।

তথ্যসূত্র: নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল (সিঙ্গাপুর), বিবিসি।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ