ঢাকা, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

শত্রু সম্পত্তি আইনে সাইফ হারাচ্ছেন ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তি

বিনোদন ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৫ ০৯:৫৫:৫৪
শত্রু সম্পত্তি আইনে সাইফ হারাচ্ছেন ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তি

পতৌদি পরিবারের রাজকীয় সম্পত্তি এখন সরকারের দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের জন্য ২০২৫ সাল শুরু থেকেই একের পর এক ধাক্কা বয়ে আনছে। বছরের শুরুতে নিজ বাসভবনে হামলার শিকার হওয়ার পর এবার তিনি হারাতে চলেছেন পরিবারের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বিপুল সম্পত্তি। ভারত সরকারের ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’-এর আওতায় সাইফের দাবি করা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে চলেছে সরকার।

আদালতের রায় গেল সরকারের পক্ষে

সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সাইফ আলি খানের করা একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। সেই আবেদনে তিনি ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে নিজের উত্তরাধিকার দাবি করেছিলেন। কিন্তু আদালতের মতে, এই সম্পত্তি ‘এনেমি প্রোপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৬৮’-এর আওতায় পড়ে এবং তাই সরকারেরই অধিকারে যাবে।

কীভাবে এই সম্পত্তি হলো ‘শত্রু সম্পত্তি’?

ভোপাল এক সময় ছিল ভারতের একটি প্রিন্সলি স্টেট, যার শেষ নবাব ছিলেন হামিদুল্লাহ খান। তার তিন কন্যার মধ্যে বড় কন্যা আবিদা সুলতান ১৯৫০ সালে পাকাপাকি ভাবে পাকিস্তানে চলে যান এবং পরে সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। আর এই কারণেই ভারত সরকার তার নামে থাকা সম্পত্তিকে 'শত্রু সম্পত্তি' হিসেবে বিবেচনা করে।

অন্যদিকে, হামিদুল্লাহ খানের দ্বিতীয় কন্যা সাজিদা সুলতান ভারতেই থেকে যান এবং বিয়ে করেন সাইফের দাদা ইফতিখার আলি খান পতৌদিকে। সাজিদা-সাইফের পারিবারিক যোগসূত্র থেকেই এই সম্পত্তির দাবিতে ২০১৫ সালে সাইফ আদালতের দ্বারস্থ হন।

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর পরাজয়

প্রায় এক দশক ধরে চলা এই মামলায় দীর্ঘদিন স্থগিতাদেশ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আদালত সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর ২০২৫ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্ট চূড়ান্তভাবে সাইফের আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে প্রায় ১৫ হাজার কোটির মূল্যমানের ঐতিহ্যবাহী জমি, প্রাসাদসহ বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তি এখন সরকারের দখলে যেতে চলেছে।

কেবল সম্পত্তি নয়, হারালেন ঐতিহ্য

এটা শুধু আইনি পরাজয় নয়, এটি একটি রাজবংশের শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য হারানোর কাহিনি। যেসব জমিতে একদিন ছিল নবাবের অধিকার, সেই জমিই এখন সরকারের সম্পত্তি হয়ে যাবে। সাইফ আলি খানের পক্ষে এখনও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ আছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় বদলানো প্রায় অসম্ভব।

কী বলছে আইন?

‘এনেমি প্রোপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৬৮’ অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের পর যেসব ব্যক্তি ভারত ছেড়ে পাকিস্তান বা চীনে চলে গিয়ে সেখানে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভারত সরকার 'শত্রু সম্পত্তি' হিসেবে গণ্য করে অধিগ্রহণ করতে পারে। এই আইনেই এবার পতৌদি পরিবারের রাজপ্রাসাদ ও সম্পদও সরকারের অধীনে চলে যাচ্ছে।

বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের জীবনে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় ধাক্কা। পরিবারিক ঐতিহ্যের প্রতীক, ভোপালের রাজকীয় সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি একটি আইনি রায়ের মাধ্যমে। ‘নবাব’ উপাধিটি এখন হয়তো কেবল সিনেমার চরিত্রেই রয়ে যাবে—বাস্তবের মঞ্চে রাজ্য হারানো এক উত্তরাধিকারীর গল্প হয়ে।

তানিয়া বৃষ্টি/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ