ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি অনড়, সত্যি হতে চলেছে সেনা প্রধানের ভবিষ্যদ্বাণী

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৮ ১৮:৫৯:১০
জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি অনড়, সত্যি হতে চলেছে সেনা প্রধানের ভবিষ্যদ্বাণী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ক্রমশই বাড়ছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর কঠোর হুঁশিয়ারি এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থান দেশকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক সংকট যেন ২০২৫ সালেও চলমান, যা আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি করেছে গভীর উদ্বেগ।

সম্প্রতি এক বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে মারামারি ও কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, "মারামারি কাটাকাটি করলে এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।" তিনি আরও বলেন, "আমি আজকে বলে দিলাম, নাইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের।" তার এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

সেনাপ্রধানের এই ভবিষ্যৎবাণী সত্য হওয়ার আশঙ্কাই যেন গ্রাস করছে পুরো জাতিকে। একদিকে বিএনপি, এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী-এর মতো বড় রাজনৈতিক শক্তিগুলো ভিন্ন ভিন্ন পথে হাঁটছে। বিএনপি বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়, কিন্তু অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পথ প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে, এনসিপি বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যেতে নারাজ, আর জামায়াতে ইসলামী তাদের পুরনো 'পিআর' পদ্ধতির দাবি তুলেছে। এই তিন শক্তির ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের রাজপথে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি একটি নতুন বাস্তবতা। সারাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই মোতায়েন অব্যাহত থাকবে। এমনকি নির্বাচনী মাঠে ৮০,০০০ সেনা সদস্য নামানোর পরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের অভাবে একপাক্ষিক নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা সেনাবাহিনীকে নতুন বিতর্কে ফেলতে পারে। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একদিকে নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান, অন্যদিকে সেনাবাহিনীকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে যেন দেখা না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

রাজনৈতিক এই অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনে জনজীবনে নেমে এসেছে হতাশা। গ্রামের সাধারণ কৃষক থেকে শহরের রিকশাচালক, সকলের মনেই শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে রয়েছে গভীর শঙ্কা।

এর মধ্যেই বাতাসে ভাসছে ষড়যন্ত্রের গুঞ্জন। কিছু সূত্রের দাবি, দেশের বাইরের কিছু শক্তি এই বিভক্তিকে উস্কে দিচ্ছে, যাদের লক্ষ্য নির্বাচনকে বানচাল করা। এমনকি কিছু বিদেশি কূটনীতিকের গোপন বৈঠকের খবরও পাওয়া যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।

সব মিলিয়ে, সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি, রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গুঞ্জনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এক ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পথে দাঁড়িয়ে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ স্থিতিশীলতার পথে ফিরবে, নাকি রাজনৈতিক সংঘাত দেশকে আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত করবে, সে উত্তর সময়ের হাতেই।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ