ঢাকা, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

২৭৫ কোটি টাকার শেয়ার জালিয়াতি, রিং শাইনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা বিএসইসির

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১৬:২৯:০৬
২৭৫ কোটি টাকার শেয়ার জালিয়াতি, রিং শাইনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা বিএসইসির

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড ২৭৫ কোটি টাকার প্রাইভেট প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত ভয়াবহ আর্থিক জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি’র ৯৬১তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয় ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে, চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এর সভাপতিত্বে। সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে রিং শাইন টেক্সটাইলের শেয়ার ইস্যু জালিয়াতি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক দফায় কঠোর আইনগত পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কি ঘটেছিল:

রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ২৭,৫১,০৪,৮২০টি শেয়ার ইস্যু করে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ২৭৫.১০ কোটি টাকা মূলধন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়। এতে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯.৯৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৫.০৫ কোটি টাকা।

তবে তদন্তে দেখা যায়, ওই মূলধনের বিপরীতে প্রকৃত অর্থ বিনিয়োগ হয়নি। বরং জমা না দিয়েই প্লেসমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার বরাদ্দ নেওয়া হয়। এতে উঠে আসে সংঘবদ্ধ আর্থিক জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগ।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত: কারা পড়ল অভিযুক্তের তালিকায়?

১. প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মামলা:

রিং শাইনের উদ্যোক্তা, তৎকালীন পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, কোম্পানি সচিব ও সিএফওসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠানো হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।

২. বিদেশগমন নিষেধাজ্ঞা:

দেশ ছাড়ার আগে যাতে কেউ পালিয়ে যেতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ১৩ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশগমন নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এ তালিকায় রয়েছেন আবদুল কাদের ফারুক ও ভারতীয় নাগরিক আশোক কুমার চিরিমার।

৩. ইস্যু ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা:

রিং শাইনের প্রাইভেট প্লেসমেন্টে দায়িত্বে থাকা AFC Capital Limited ও CAPM Advisory Limited এর বিরুদ্ধে ডিউ ডিলিজেন্সে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তাদের তৎকালীন CEO-দের ৫ বছরের জন্য শেয়ারবাজার সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠান দুটির নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

৪. অডিট ফার্মগুলোর জবাবদিহিতা:

কোম্পানির ২০১৫-২০২০ সময়কালের মিথ্যা আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার অভিযোগে চারটি অডিট ফার্ম ও তাদের পার্টনারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে FRC-তে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ওই ফার্মগুলো হলো:

Ahmed & Akhter, Chartered Accountants

Shiraz Khan Basak & Co.

Mahfel Huq & Co.

ATA Khan & Co.

৫. প্লেসমেন্ট হোল্ডারদের তদন্ত:

যেসব বহিরাগত প্লেসমেন্ট হোল্ডার অর্থ জমা না দিয়ে শেয়ার নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি দুদকে প্রেরণ করা হবে।

শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট?

এই কেলেঙ্কারি শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় আঘাত হেনেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বড় অঙ্কের মূলধন বিনিয়োগ ছাড়াই শেয়ার বরাদ্দ, মিথ্যা আর্থিক বিবরণী ও দুর্নীতির জাল বিছিয়ে কোম্পানি কিভাবে বাজারে আসতে পেরেছে—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রাইম ফাইন্যান্সের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা:

একই সভায় আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। Prime Finance and Investment Limited, PFI Securities Limited ও Prime Finance Capital Management Limited – এ তিন প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ২৯৬ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তৎকালীন পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকে রিপোর্ট পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের দেশত্যাগও নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

কমিশনের বক্তব্য:

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ আবুল কালাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,

“কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি শেয়ারবাজারে প্রতারণা করলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণই কমিশনের নীতিগত অঙ্গীকার।”

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ