ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

ডিবি হারুন কিভাবে পালালেন? সেনা ক্যান্টনমেন্ট থেকে আমেরিকা!

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ২০:১৮:২৩
ডিবি হারুন কিভাবে পালালেন? সেনা ক্যান্টনমেন্ট থেকে আমেরিকা!

রাজনৈতিক দানব থেকে পলাতক, ‘চেইন অফ কমান্ড’ বলা সেই পুলিশ কর্মকর্তা এখন ফ্লোরিডায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার হারুনুর রশিদের উত্থান ও পতন যেন এক নাটকীয় কাহিনি। ক্ষমতার চরম শিখরে ওঠা এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে নির্যাতন, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ। ২০২৩ সালে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর হঠাৎ করেই গা-ঢাকা দেন তিনি। এরপর কীভাবে তিনি সেনা হেফাজত থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালেন, তা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

সেনা হেফাজতে ছিলেন শুরুতে

ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমে যখন শেখ হাসিনার সরকার হটিয়ে দেওয়া হয়, তখন সরকারের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতো হারুনুর রশিদও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। জানা যায়, প্রথম কয়েকদিন তিনি সেনাবাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। রাজনৈতিক পালাবদলের এই অস্থির সময় তিনি নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক ক্যান্টনমেন্টেই আশ্রয় নেন।

নাটকীয়ভাবে ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট রাতে, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হারুন গোপনে ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করেন। কেউ বুঝে ওঠার আগেই তিনি রাজধানী ছেড়ে চলে যান আখাউড়া সীমান্তের দিকে। সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয় সূত্র বলছে, সেদিন রাতে বিশেষ নিরাপত্তায় একজন ‘উচ্চপদস্থ ব্যক্তি’ ভারতে প্রবেশ করেন। পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেই ব্যক্তিই ছিলেন হারুন।

নেপাল হয়ে ক্যারিবিয়ান পাড়ি

ভারতে ঢোকার পর খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে হারুন নেপাল চলে যান। সেখান থেকে পাড়ি জমান ক্যারিবীয় অঞ্চলের সেন্ট লুসিয়ায়। এই দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছে তিনি কিছুদিন অবস্থান করেন। ধারণা করা হয়, সেখানে অবস্থানকালেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রস্তুতি নেন।

গন্তব্য ফ্লোরিডা, পরিবার আগে থেকেই প্রস্তুত

পরিকল্পনা ছিল অনেক আগেই। হারুনের পরিবার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাস করছিল। তাঁরা ছিলেন গ্রিন কার্ডধারী। পরিবারের সেফ প্যাসেজ নিশ্চিত করে হারুন নিজেও ফ্লোরিডায় পৌঁছান। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অপরাধের ইতিহাস: ‘চেইন অফ কমান্ড’ থেকে ‘দানব’ পরিচয়ে

হারুনুর রশিদের পলায়নের পেছনে কারণ সুস্পষ্ট—তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে বহু অভিযোগ। ডিবির দায়িত্বে থাকাকালে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘পঞ্চপাণ্ডব’ নামের একটি নির্যাতনকারী চক্র। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়, নির্যাতন, অর্থ আদায়, এমনকি বিচারহীন নিপীড়নের একক আধিপত্য ছিল তাঁর।

তিনি নিজেকে ‘চেইন অফ কমান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরে ভয়ভীতির বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন।

কোটি টাকার সম্পদ, তিনটি দুর্নীতি মামলা

হারুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যেই তিনটি মামলা করেছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় দায়িত্ব পালনের সময় তিনি অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন—এমন অভিযোগ রয়েছে। গাজীপুরে তাঁর নামে একাধিক জমি ও বাড়ির হদিস মিলেছে।

পালালেও কি রক্ষা হবে?

বর্তমানে ফ্লোরিডায় অবস্থান করলেও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির রয়েছে।

তাই, প্রশ্ন উঠছে—ডিবি হারুন কি সত্যিই রক্ষা পেয়ে যাবেন, নাকি তাঁকেও একদিন আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে?

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ