ঢাকা, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি: বিশেষজ্ঞদের মত এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৪ ১৮:১০:৩৮
নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি: বিশেষজ্ঞদের মত এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী পদ্ধতি (Proportional Representation বা পিআর) নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা ও উত্তেজনা বাড়ছে। পিআর পদ্ধতিকে সমর্থন ও বিরোধিতায় বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলোতে এ নিয়ে মতবিরোধ প্রকট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরাও পিআর পদ্ধতির কার্যকারিতা ও প্রভাব নিয়ে নানা দিক থেকে আলোচনা করছেন।

পিআর পদ্ধতি: পক্ষ ও বিপক্ষের অবস্থান

দেশে নিবন্ধিত প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রায় ১৮টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ কিছু ইসলামি দল দৃঢ়ভাবে পিআরের সমর্থক। অন্যদিকে, বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং নাগরিক ঐক্যসহ অন্তত ২৮টি দল পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, “আমরা পিআর পদ্ধতির প্রবক্তা হলেও এত অল্প সময়ে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।” তিনি বলেন, দেশের নির্বাচনী পরিবেশ এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি এই পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, “সরকারি প্রভাবমুক্ত, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে প্রচলিত পদ্ধতিতেই দেশের অর্ধেক ঝামেলা কমে যাবে। পিআর পদ্ধতির প্রয়োজন তখনই উঠে যখন ভোটারদের অধিকার সংকটে থাকবে।”

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক পিআর পদ্ধতির প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, “ভোটার যাকে ভোট দিচ্ছেন, তিনি এমপি হবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। কারণ দলীয় সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পায়। এতে ভোটারের প্রত্যক্ষ ভোটের গুরুত্ব হ্রাস পায়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে যেখানে আঞ্চলিক দল নেই, সেখানে পিআর পদ্ধতির প্রয়োগ জটিলতা বাড়াবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সাম্প্রতিক ঘটনা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মহাসমাবেশে পিআর পদ্ধতি না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামিও আগামী ১৯ জুলাই শোডাউনসহ আরও বড় সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিরোধী এবং দলীয় সিদ্ধান্তে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। তবে দলটির অভ্যন্তরে পিআর নিয়ে একরকম দ্বিমত রয়েছে।

পর্যালোচনা

পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক ও বিশেষজ্ঞদের মতবিরোধ স্পষ্ট করে যে, এটি শুধু একটি নির্বাচনী পদ্ধতির পরিবর্তন নয়; বরং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ক্ষমতার ভাগাভাগি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনী পরিবেশ ও রাজনৈতিক সংলাপকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে পিআর পদ্ধতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।

FAQ:

প্রশ্ন: পিআর পদ্ধতি কি?

উত্তর: পিআর বা প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী পদ্ধতি হলো একটি সিস্টেম যেখানে ভোটারের ভোট দলভিত্তিক ভাগাভাগির মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা হয়।

প্রশ্ন: পিআর পদ্ধতির সুবিধা কী?

উত্তর: পিআর পদ্ধতি নির্বাচনে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে এবং ছোট দলগুলোর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন: কেন বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিরোধী?

উত্তর: বিএনপি মনে করে পিআর পদ্ধতিতে দলের সিদ্ধান্ত ভোটারের ব্যক্তিগত পছন্দের চেয়ে প্রাধান্য পায়, যা গণতান্ত্রিক স্বার্থে ক্ষতিকর।

প্রশ্ন: পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশে কতটা কার্যকর?

উত্তর: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে এবং যেখানে আঞ্চলিক দল কম, সেখানে পিআর পদ্ধতি প্রয়োগ জটিলতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ