ঢাকা, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

৬০ দিনের বেশি বরখাস্ত অবৈধ? হাইকোর্ট রায়েও গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএসইসি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ০৯:৪০:১৫
৬০ দিনের বেশি বরখাস্ত অবৈধ? হাইকোর্ট রায়েও গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বরখাস্ত হওয়া ২১ জন কর্মকর্তার পুনর্বহাল ও বকেয়া বেতন-সুবিধার আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগের শুনানি শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা শুরু হবে আগামী বুধবার।

গত ২৯ এপ্রিল ২০২৫, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় "পরিষেবা বিধি লঙ্ঘনের" অভিযোগে এসব কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কমিশন। তবে বরখাস্তের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কমিশন এখনো তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।

আইনি ব্যাখ্যায় ফেরার চেষ্টা, কমিশনের অনমনীয়তা

বিএসইসি সূত্র জানায়, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের অধিকাংশই হাইকোর্টের ২০১৫ সালের একটি রায়ের উল্লেখ করে অফিসে ফিরে এসেছেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। ওই রায়ে বলা হয়েছিল—কোনো সরকারি বা আধা-সরকারি সংস্থা কোনো কর্মচারীকে আইনগত কারণ ছাড়া ৬০ দিনের বেশি বরখাস্ত রাখতে পারবে না। এ সময়সীমা পেরিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পূর্ণ বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন।

এই রায়ের আলোকে অন্তত ১৮ জন কর্মকর্তা কমিশনে লিখিত আবেদন জমা দেন। তাদের দাবি, বরখাস্তের মেয়াদ ৬০ দিন পেরিয়ে গেছে, তাই তাদের পুনর্বহাল ও বকেয়া পাওনা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে বিএসইসি কমিশনার মোহসিন চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "আইনি পরামর্শ অনুযায়ী এসব আবেদন নাকচ করা হয়েছে। যেই আদালতের রায় তারা দেখাচ্ছেন, সেটি বিএসইসি’র জন্য প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে আমরা চিঠির মাধ্যমে তাদের জানিয়ে দিয়েছি।"

বিভ্রান্তি ও প্রশাসনিক স্থবিরতা

তবে বিএসইসির আইন বিভাগ এখনো এই বিষয়ে চূড়ান্ত মত দেয়নি বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে। এ অবস্থায় এক ধরনের প্রশাসনিক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে অফিসে এসে বসেছেন বরখাস্ত পরিচালক আবু রায়হান মো. মুতাসিম বিল্লাহ, কার্যনির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক আবুল হাসান, ফখরুল ইসলাম মজুমদার, উপ-পরিচালক নন্নু ভূঁইয়া এবং সহকারী পরিচালক আমিনুল হক খানসহ অনেকে।

তবে কমিশন এখন পর্যন্ত তাদেরকে কোনো দায়িত্ব দেয়নি বা প্রশাসনিক আদেশ দেয়নি। এমন অবস্থায় তারা বসে থাকলেও দায়িত্বহীনভাবে সময় পার করছেন, যা অফিসের পরিবেশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

প্রতিশোধমূলক আচরণের অভিযোগ

বহিষ্কৃত কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, বিষয়টি এখন কেবল প্রশাসনিক নয়, বরং ব্যক্তিগত প্রতিশোধের রূপ নিচ্ছে। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চিঠিতে বলা হয়েছে আইনগত পরামর্শে আবেদন খারিজ, কিন্তু সেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির কথা উল্লেখ নেই। এটা স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।”

বিতর্কিত নিয়োগে ক্ষোভ আরও তীব্র

এদিকে বিএসইসিতে প্রেষণে আসা উপ-সচিব মনির হোসেন হাওলাদারকে প্রথমে যুগ্ম পরিচালক এবং পরে পরিচালক পদে উন্নীত করা হয়েছে, যা বিদ্যমান কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। কারণ, একদিকে অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা বরখাস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন, অন্যদিকে বাহির থেকে এনে কাউকে সরাসরি উচ্চপদে বসানো হয়েছে।

বরখাস্ত কর্মকর্তাদের তালিকা

বরখাস্ত ২১ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন—

কার্যনির্বাহী পরিচালক: রেজাউল করিম

পরিচালক: আবু রায়হান মো. মুতাসিম বিল্লাহ, আবুল হাসান, ফখরুল ইসলাম মজুমদার

অতিরিক্ত পরিচালক: নজরুল ইসলাম, মেরাজ-উস-সুন্নাহ

যুগ্ম পরিচালক: রাশেদুল ইসলাম

উপ-পরিচালক: বনি ইয়ামিন, আল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, নন্নু ভূঁইয়া

সহকারী পরিচালক: জনি হোসেন, রায়হান কবির, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল বাতেন, আমিনুর রহমান খান, তারিকুল ইসলাম, সমীর ঘোষ

অন্যান্য: গ্রন্থাগারিক মো. সেলিম রেজা বাপ্পি, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ

বিএসইসির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আইনি জটিলতা এখন একটি বড় প্রশাসনিক সংকটে পরিণত হয়েছে। কর্মকর্তাদের বরখাস্ত, তাদের অফিসে ফিরে আসা, আবেদন প্রত্যাখ্যান এবং দায়িত্বহীন অবস্থায় থাকা—সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি এবং কার্যকারিতা দুটোই ক্ষতির মুখে। এখন প্রয়োজন স্বচ্ছ, আইনি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ