ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বিএনপি থেকে দূরে লুৎফুজ্জামান বাবর? জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন কি?

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১৫:৩৭:০৫
বিএনপি থেকে দূরে লুৎফুজ্জামান বাবর? জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ১৭ বছর কারাভোগ শেষে চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তার মুক্তি ঘিরে নেত্রকোনা থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে সৃষ্টি হয়েছিল এক আবেগঘন পরিবেশ। কারাফটকে হাজারো মানুষের জড়ো হওয়া এবং উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে, মানুষ তাকে ভুলে যায়নি।

তবে এই আবেগ স্থায়ী হয়নি। অল্প কিছুদিন গণমাধ্যমে সক্রিয় থাকার পর হঠাৎ করেই অন্তরালে চলে যান বাবর। রাজনীতির মাঠ, দলীয় সভা কিংবা টকশো—কোনো জায়গাতেই তার দেখা মেলেনি। তার এই আকস্মিক নীরবতা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।

বিএনপি থেকে দূরত্ব বাড়ছে?

বাবরের রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক বহু পুরোনো। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় দল তাকে মনোনয়ন না দিলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এর জেরে ভোটের ঠিক তিন দিন আগে তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। পরে অবশ্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবু, আর কখনোই দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে আসেননি তিনি।

দলের ভেতরে অনেকেই মনে করেন, শীর্ষ নেতৃত্ব বাবরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এক সময়ের শক্ত ঘাঁটি নেত্রকোনা-৪ আসনেও এখন তাকে নিয়ে বিভাজন রয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন কি না, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেই রয়েছে দ্বিধা।

জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন?

বাবরকে ঘিরে নতুন গুঞ্জন আরও বড় আকার নিয়েছে। অনেকে বলছেন, তিনি কি বিএনপি ছেড়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিতে যাচ্ছেন?

এই প্রশ্নের পেছনে উসকানি দিয়েছে সাম্প্রতিক একটি ভিডিও। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের মায়ের মৃত্যুশোক জানাতে গিয়ে বাবরের সঙ্গে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন এবং হৃদ্যতা প্রদর্শনের সেই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে। অনেকে এটিকে সম্ভাব্য রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত বলেই দেখছেন।

ভারতবিরোধী অবস্থান, মামলার ইতিহাস ও বিতর্ক

বাবরের রাজনৈতিক জীবন নানা ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ভারতবিরোধী কঠোর অবস্থান ও স্পষ্টভাষী বক্তব্যের কারণে তিনি সবসময় আলোচনায় ছিলেন।

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা:

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে আটক হওয়া অস্ত্রচালান নিয়ে মামলায় তার নাম উঠে আসে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে। অভিযোগ ছিল, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার কাছে এসব অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়।

কিবরিয়া হত্যা মামলা:

২০০৫ সালে হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাতেও বাবরের নাম যুক্ত হয়।

অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে এককভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম এমন একজন রাজনীতিক ছিলেন বাবর। সীমান্ত নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তার দৃঢ় অবস্থান ভারতকে বহুবার বিব্রত করেছে।

নীরবতা শুধু অসুস্থতার জন্য?

বাবরের ঘনিষ্ঠরা দাবি করছেন, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই রাজনীতি থেকে আপাতত দূরে রয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে এটিকে কৌশলগত ‘সাইলেন্স’ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতবিরোধী শক্তির প্রতি মানুষের এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে বাবরের মতো নেতাকে উপেক্ষা করা বিএনপির জন্য রাজনৈতিক ভুল হতে পারে।

লুৎফুজ্জামান বাবরের ভবিষ্যৎ ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি কি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন? নাকি ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবেন সেই নেতা হিসেবে, যাকে একসময় ভারত "ভূতের চেয়েও ভয় পেত"?—উত্তর সময়ই দেবে।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ