ঢাকা, সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

মডেল শান্তা পাল কীভাবে পেলেন ভারতীয় নাগরিকের পরিচয়?

বিনোদন ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০২ ২০:০৫:৪৬
মডেল শান্তা পাল কীভাবে পেলেন ভারতীয় নাগরিকের পরিচয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক: কলকাতার যাদবপুরের এক আবাসিক ফ্ল্যাটে থাকতেন এক তরুণী, যিনি পরিচয় দিতেন নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে। তাঁর হাতে ছিল আধার কার্ড, ভোটার আইডি—সবকিছু ঠিকঠাক বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ভিন্ন সত্য। শেষ পর্যন্ত সেই মুখোশ খুলে গেল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতায়। ধরা পড়লেন শান্তা পাল—বাংলাদেশি মডেল, অভিনেত্রী এবং একাধিক ফ্যাশন প্রতিযোগিতার পরিচিত মুখ।

গত ৩০ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর এলাকার বিজয়গড় থেকে শান্তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ, তিনি ভারতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত প্রতারণা করে আসছিলেন। জাল আধার ও ভোটার আইডি ব্যবহার করেই নিজেকে ভারতীয় বলে প্রমাণের চেষ্টা করেন তিনি।

গ্রেপ্তারের পর শান্তাকে আদালতে হাজির করা হলে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। তদন্তে উঠে আসে, ২০২৩ সাল থেকে তিনি যাদবপুরে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়াটে হিসেবে থাকছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করতেন তিনি, যাতে তাঁর আসল পরিচয় চাপা পড়ে যায়।

তল্লাশি চালিয়ে শান্তার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি—বাংলাদেশি পাসপোর্ট, এসএসসি অ্যাডমিট কার্ড, একটি বিমান সংস্থার আইডি কার্ডসহ আরও বেশ কিছু কাগজপত্র। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এইসব নথির ভিত্তিতেই তিনি ভারতের আধার ও ভোটার কার্ড সংগ্রহ করেছিলেন। বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে UIDAI, নির্বাচন কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহায়তায়।

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেন, "নথিপত্র জালিয়াতি এবং প্রতারণার অভিযোগে শান্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা কাগজগুলো আসল না জাল, তা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর স্বামীর ভূমিকা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।"

শান্তা পাল শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কিছুটা পরিচিতি পেয়েছেন। বাংলাদেশের দুটি শীর্ষ ব্র্যান্ডের হয়ে মডেলিং করেছেন তিনি। বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক ঘটে 'ব্যাচেলর ইন ট্রিপ' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এছাড়া তামিল ভাষার সিনেমা 'ইয়েরালাভা'-তেও অভিনয় করেছেন, যার পরিচালক ছিলেন বিশ্বনাথ রাও।

তাঁর গ্রেপ্তার শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি নাগরিকত্ব জালিয়াতির এক জটিল ও গভীর জাল উন্মোচনের ইঙ্গিত। শান্তার এই কাহিনি এখন আইনি ব্যবস্থার আওতায় বিচারাধীন, তবে এর রেশ ছড়িয়ে পড়েছে দুই দেশের আইন ও প্রশাসন ব্যবস্থার মধ্যে।

অভিনয় জীবনের উজ্জ্বল অধ্যায়ের পেছনে লুকিয়ে থাকা এই অন্ধকার অধ্যায় এখন আলোচনার কেন্দ্রে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শান্তার ভবিষ্যৎ যেমন অনিশ্চিত, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কিছু রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও যাচাইকরণ প্রক্রিয়াও।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ