ঢাকা, শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

বিবিসিকে সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম, উঠে এলো এতদিনের গোপন কথা

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১৭:৩৪:৩২
বিবিসিকে সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম, উঠে এলো এতদিনের গোপন কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ভেতরে এখন তাঁর পদচিহ্ন নেই, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও অনুপস্থিত। তবে ভারতে বসেই চালিয়ে যাচ্ছেন সংগঠনের ভার্চুয়াল রাজনীতি। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক অনুসন্ধানী সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেইন তুলে ধরেছেন নিজের বর্তমান অবস্থান, নির্বাসিত রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ক্যাম্পাসছাড়া থাকার বেদনার কথা। উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা এতদিন ছিল অনেকটাই গোপন।

‘প্রায় এক বছর ভারতে আছি’ — সাদ্দামের স্বীকারোক্তি

বিবিসির প্রতিবেদনে সাদ্দাম হোসেইন বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছি।’ দেশের রাজনীতি থেকে হঠাৎ ছিটকে পড়া ছাত্রলীগ সভাপতি জানালেন, তিনি দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে না যেতে পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

তাঁর কণ্ঠে এক ধরনের বিষন্নতা—

‘এক বছর ধরে ক্যাম্পাস মিস করি। তবে দেশে থাকলেও ক্যাম্পাসে যেতাম না।’

এই মন্তব্যেই যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক তরুণ নেতার বাধ্যতামূলক গুটিয়ে নেওয়ার কষ্ট।

‘শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বঞ্চিত ছাত্ররা’

সাক্ষাৎকারে সাদ্দাম অভিযোগ করেন, বর্তমানে হাজার হাজার ছাত্রলীগকর্মী ক্লাস-পরীক্ষা দিতে পারছেন না, এমনকি সার্টিফিকেটও পাচ্ছেন না—শুধুমাত্র তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে।

তাঁর ভাষায়, ‘এটা শুধু ছাত্রলীগ নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রেও ঘটছে। অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিতে পারেনি, কারণ তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সদস্য।’

গোপন পার্টি অফিস ও ভার্চুয়াল রাজনীতির চিত্র

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে, ভারতের কলকাতার কাছাকাছি একটি শহরতলিতে একটি বাণিজ্যিক ভবনের অষ্টম তলায় গড়ে তোলা হয়েছে আওয়ামী লীগের ‘অঘোষিত পার্টি অফিস’। ছোট্ট এক অফিসঘর থেকেই সেখানকার নেতা-কর্মীরা চালাচ্ছেন দলীয় কর্মকাণ্ড।

ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে চলছে নিয়মিত যোগাযোগ—হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ফেসবুক লাইভ ও জুম মিটিংয়ে সক্রিয় ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত চলছে বৈঠক।

নেতারা কেন ভারতে?

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ভারতে আশ্রয় নেন। কলকাতা ও আশপাশের শহরগুলোতে ফ্ল্যাট বা ভাড়াবাসায় তাঁরা পরিবারসহ কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে বসবাস করছেন।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা এখন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। তাঁদের মতে, শেখ হাসিনা ও দলীয় হাইকমান্ড যেহেতু ভারতে, সেখান থেকেই আসছে সব নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত।

‘আন্দোলন থেকে নির্বাসন’—নতুন বাস্তবতা

এক সময় রাজপথের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগ সভাপতি আজ বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত। ক্যাম্পাসে তাঁর পদচারণ নেই, নেই রাজনীতির চেনা উত্তাপ। তবুও ভার্চুয়ালি সংগঠন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তাঁর কণ্ঠে স্পষ্ট।

এই সাক্ষাৎকার শুধু একজন ছাত্রনেতার মনোজগৎ নয়, বরং একটি পুরো রাজনৈতিক ধারার নির্বাসিত বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। গোপনে গড়ে ওঠা পার্টি অফিস, ভার্চুয়াল কমান্ড সেন্টার আর আত্মগোপনে থাকা শতাধিক নেতার এক নতুন অধ্যায়ের শুরু এটি—যার শেষ কোথায়, কেউ জানে না।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ