ব্রেকিং নিউজ: পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশে নতুন নিয়ম!

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পাসপোর্ট বা অন্যান্য ভ্রমণ নথি ছাড়াই ভারতে প্রবেশকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে ভারত সরকার। সোমবার থেকে কার্যকর হওয়া ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাক্ট-২০২৫ এর আওতায় এই সংখ্যালঘুরা অতিরিক্ত সময়ের জন্য ভারতে অবস্থান করতে পারবেন এবং কোনো ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হবেন না বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

কারা সুবিধা পাবেন?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যে সকল সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে পাসপোর্ট বা অন্যান্য ভ্রমণ নথি ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা সেখানে অবস্থানের অনুমতি পাবেন। এমনকি যাদের নথির মেয়াদ দেশটিতে প্রবেশের পর শেষ হয়ে গেছে, নতুন আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না।

তিব্বতি, নেপালী ও ভুটানি নাগরিকদের জন্য বিশেষ ছাড়

সোমবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারি করা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স (এক্সেম্পশন) আদেশ ২০২৫ অনুযায়ী, নেপাল ও ভুটানের নাগরিকদের পাশাপাশি তিব্বতিদেরও একই ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে। যারা ১৯৫৯ সাল থেকে ২০০৩ সালের ৩০ মে এর মধ্যে কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃক জারি করা বিশেষ প্রবেশ অনুমতিপত্র নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট বিদেশি নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে নিবন্ধন করেছিলেন, তারাও এই সুবিধা পাবেন।

কিছু ব্যতিক্রম ও জরিমানা

তবে, নেপাল ও ভুটানের নাগরিকরা যদি চীন, ম্যাকাও, হংকং বা পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ বা প্রস্থান করেন, তাহলে তারা আইনের ২১ নম্বর ধারার সুবিধা পাবেন না। এই ধারা অনুযায়ী, বৈধ পাসপোর্ট অথবা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ রুপি জরিমানা হতে পারে। ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারতে থেকে গেলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩ লাখ রুপি জরিমানা হতে পারে।

সামরিক ও কূটনৈতিক কর্মীদের জন্য ছাড়

আইদেশে বলা হয়েছে, কোনো দেশের তিন বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালনের জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতে আসা-যাওয়া করলেও তাদের কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না। এছাড়া বিদেশি কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসার প্রয়োজন নেই।

জরিমানার পরিমাণ

ভারত সরকার এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনের বিধি লঙ্ঘনের জরিমানার পরিমাণও জানিয়ে দিয়েছে:

৩০ দিন পর্যন্ত অতিরিক্ত অবস্থান: ১০ হাজার রুপি

৩১-৯০ দিন পর্যন্ত: ২০ হাজার রুপি

৯১-১৮০ দিন পর্যন্ত: ৫০ হাজার রুপি

১৮১ দিন থেকে এক বছরের বেশি: ১ লাখ রুপি

এক বছরের বেশি: প্রতি অতিরিক্ত বছরের জন্য ৫০ হাজার রুপি (সর্বোচ্চ ৩ লাখ রুপি)

এছাড়াও, অব্যাহতি পাওয়া ছাড়া বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া যারা ভারতে প্রবেশ করবেন, তাদের সংশ্লিষ্ট ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে ৫ লাখ রুপি জরিমানা দিতে হবে। তিব্বতি, মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি ভিসাধারীদের অতিরিক্ত সময় ধরে অবস্থানের কারণে ৫০ থেকে ৫৫০ রুপি পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।

এই নতুন নিয়মগুলো ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য ভারতে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আব্দুর রহিম/