ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২

যুগান্তকারী সংস্কার: নতুন আইনেই থেমে যাবে শেখ হাসিনার রাজনীতি

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ২০:২০:০৮
যুগান্তকারী সংস্কার: নতুন আইনেই থেমে যাবে শেখ হাসিনার রাজনীতি

দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় এক বিশাল পরিবর্তনের আভাস নিয়ে আসছে নতুন খসড়া আইন, যা দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো কার্যকর হলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া, প্রার্থীদের যোগ্যতা, ভোটারদের অধিকার এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা—সব কিছুতেই আসবে আমূল পরিবর্তন।

'না ভোট' এবং একক প্রার্থী:

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে একটি হলো 'না ভোট' বা 'নেগেটিভ ভোট' প্রথা চালু করা। যদি কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকেন, তাহলে ভোটাররা সেই প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে না চাইলে 'না ভোট' দিতে পারবেন। এটি ভোটারদের অধিকারকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে মনে করছেন অনেকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিধি বৃদ্ধি:

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় এবার যুক্ত করা হয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে। এর ফলে নির্বাচনের সময় তাদের ভূমিকা এবং ক্ষমতা আইনের আওতায় আরও স্পষ্ট হবে।

সম্পদের হলফনামা ও জবাবদিহিতা:

প্রার্থীদের জন্য সম্পদের হলফনামা সংক্রান্ত নিয়মে কঠোরতা আনা হয়েছে। এখন থেকে দেশি ও বিদেশি সব সম্পদের বিবরণ বাধ্যতামূলকভাবে হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে। যদি কোনো প্রার্থী মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। এটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

জামানত বৃদ্ধি ও পোলিং এজেন্টের নতুন নিয়ম:

নির্বাচনী জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা প্রার্থীদের জন্য একটি বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। একই সাথে, পোলিং এজেন্টদের বিষয়েও নতুন নিয়ম চালু হয়েছে; এখন থেকে পোলিং এজেন্ট হতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই নিজ এলাকার ভোটার হতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা পুনর্বহাল:

নির্বাচন কমিশনের হাতে আবারও পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে কমিশনের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

ইভিএম বাতিল ও ব্যয়সীমা পরিবর্তন:

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সব ধারা খসড়া থেকে বাতিল করা হয়েছে, যা পূর্বে ইভিএম নিয়ে ওঠা বিতর্কের অবসান ঘটাবে। এছাড়া, একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে একজন প্রার্থী ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন, যা পূর্বের সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার সীমা থেকে অনেক কম।

প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বৃদ্ধি:

প্রিজাইডিং অফিসারকে ভোটকেন্দ্রের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে, যা ভোটকেন্দ্রের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ভূমিকা আরও জোরালো করবে।

জোট প্রার্থিতার প্রতীক:

জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। এটি জোটের মধ্যে দলীয় পরিচিতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও আশঙ্কা:

সাবেক নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন তুলি এই খসড়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “ফেরারি আসামিদের অযোগ্য ঘোষণার বিধানটি ইতিবাচক হলেও এর অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে। প্রশাসন বা পুলিশ প্রভাব খাটালে নিরীহ অনেকেই হয়রানির শিকার হতে পারেন।”

পরবর্তী পদক্ষেপ:

এই খসড়া সংশোধনীটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে এটি সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাবে এবং সবশেষে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংশোধনীগুলো কার্যকর হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনগুলো দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে এবং আসন্ন নির্বাচনে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ