ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

সরকারের মাস্টারপ্ল্যান: শেয়ারবাজারে আসছে বড় পরিবর্তন, তৈরি হন!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৯:০০:৪৭
সরকারের মাস্টারপ্ল্যান: শেয়ারবাজারে আসছে বড় পরিবর্তন, তৈরি হন!

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার, যা বিগত কয়েক বছর ধরে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টের সংকীর্ণ সীমায় ওঠানামা করছিল, এখন এক নতুন আশার আলো দেখছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপগুলি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে, যা বাজারের ভবিষ্যৎ গতিপথকে ইতিবাচক দিকে মোড় নিতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের মূল লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বাজারকে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা প্রদান করা। এই লক্ষ্য পূরণে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) নতুন মূলধন সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আর্থিক সহায়তার হাতছানি: বাজারের প্রাণশক্তি বৃদ্ধি

শেয়ারবাজারের গতিশীলতা বাড়াতে সরকার আইসিবিকে ২ হাজার কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে, যা বাজারের তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করবে। এছাড়া, ২০১০ সালের বাজার বিপর্যয়ের পর গঠিত ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলটি আরও পাঁচ বছরের জন্য, অর্থাৎ ২০৩২ সাল পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়েছে। এই তহবিলটি প্রথম পর্যায়ে ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে সহায়তা করেছিল এবং বর্তমানে এটি ঘূর্ণায়মান ভিত্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর জন্য এক বড় স্বস্তি।

গুণগত মানসম্পন্ন শেয়ারের আগমন: বাজারের আকর্ষণ বৃদ্ধি

দীর্ঘদিন ধরে ভালো মানের শেয়ারের সংকটে ভোগা শেয়ারবাজারের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী খবর। সরকারি সংস্থাগুলি দশটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছয়টি বহুজাতিক সংস্থা: ইউনিভার, নেসলে, নোভারটিস, সিনজেনটা, সিনোভিয়া (সাবেক সানোফি বাংলাদেশ) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি। সরকার এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলির মালিকানার কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ শেয়ার জনগণের কাছে অফলোড করার পরিকল্পনা করছে।

এছাড়াও, চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে: পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন।

বিনিয়োগকারীরা এই উদ্যোগকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, তোফায়েল রতন, এই পদক্ষেপকে 'গেম চেঞ্জার' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির উদাহরণ টেনে বলেন, "যখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হবে, তখন এটি শেয়ারবাজারে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিনিয়োগকারীরা এই উচ্চ-পারফর্মিং কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।" তবে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলির তালিকাভুক্তিতে অতীতের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে তার কিছুটা ক্ষোভ থাকলেও, দেশের প্রধান নির্বাহীর সাম্প্রতিক ঘোষণা তাকে আশাবাদী করেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার আধুনিকীকরণ: স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে আরও স্বচ্ছতা ও ন্যায্য লেনদেন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিধিমালা সংস্কারের কাজ করছে। মার্জিন, মিউচুয়াল ফান্ড এবং পাবলিক ইস্যু সংক্রান্ত বিধিমালায় আধুনিকীকরণের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে, যা বাজারের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)-এর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম এই পদক্ষেপগুলিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভালো কোম্পানির অভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। তার মতে, এই উদ্যোগগুলি বাস্তবায়িত হলে শেয়ারবাজারে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

সার্বিকভাবে, সরকারের এই বহুমুখী উদ্যোগ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করাতে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ