ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

এনবিআরকে কাঠগড়ায় ব্যবসায়ীরা: হয়রানি, দুর্নীতিতে ধুঁকছে অর্থনীতি!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১৬:১০:০১
এনবিআরকে কাঠগড়ায় ব্যবসায়ীরা: হয়রানি, দুর্নীতিতে ধুঁকছে অর্থনীতি!

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সদর দফতরে আয়োজিত এক শুনানিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা রাজস্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি, অনিয়ম এবং অর্থ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। ব্যবসায়ীরা এনবিআর-কে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টির জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

শুনানিতে জেসিস সুজ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নাসির খান, তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এনবিআর কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।" তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, যখন উচ্চ আদালত এসব মিথ্যা মামলা থেকে কোম্পানিগুলোকে অব্যাহতি দেয়, তখন দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। খান প্রশ্ন তোলেন, "বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, মিথ্যা মামলা দায়ের করা একটি অপরাধ। তাহলে যারা মিথ্যা মামলা করছে, তাদের কেন জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে না?"

নাসির খান আরও বলেন, ত্রুটিপূর্ণ রাজস্ব কাঠামোর কারণে ৩৫ বছর ধরে জুতা রপ্তানি করা সত্ত্বেও তার ব্যবসা আশানুরূপভাবে বড় হতে পারছে না। তিনি এনবিআর-এর কঠোর নীতির কারণে ব্যবসায়ীদের "বনসাই" হয়ে থাকার অভিযোগ করেন এবং "সবার ঋণখেলাপি হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ এনবিআর" বলে মন্তব্য করেন।

দুর্নীতি ও অযৌক্তিক করের বোঝা:

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা ৭২ শতাংশের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুষ ও হয়রানিকে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জরিপে আরও উঠে এসেছে যে, ৮২ শতাংশ ব্যবসায়ী বর্তমান কর হারকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন।

একটি শীর্ষস্থানীয় স্টিল মিলের প্রতিনিধি অভিযোগ করেন যে, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পণ্য বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে পাঠিয়ে দেয়, যার ফলে অযথা খরচ এবং পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়।

বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, মাহবুবুর রশিদ জুয়েল, টার্নওভার করকে তাদের শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ভারী শিল্পে মুনাফার হার কম হলেও টার্নওভার বেশি থাকে, যা তাদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, মো. আব্দুল ওয়াহেদ, রিফান্ড (ফেরত) পেতে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ করেন। আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, ইমরান হাসান। তিনি বলেন, “এনবিআর কর্মকর্তারা সরাসরি টাকা আদায় করেন। মোট ভ্যাট ও করের মাত্র ২০ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে, বাকি ৮০ শতাংশ এনবিআর কর্মকর্তা ও অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।"

এনবিআর চেয়ারম্যানের আশ্বাস:

ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান পরিস্থিতি স্বীকার করে বলেন, "ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কষ্টার্জিত আয়ের একটি অংশ কর হিসেবে দেয়, কিন্তু তারা প্রায়শই মনে করে যে এর বিনিময়ে তারা সঠিক সেবা বা সুবিধা পাচ্ছে না।" তিনি টার্নওভার করের বোঝা স্বীকার করে বলেন, "এটি রাজস্ব ঘাটতি মেটানোর জন্য অপরিহার্য। আমাদের রাজস্ব বাড়াতে হবে, এটাই বাস্তবতা। সবাইকেই অবদান রাখতে হবে। একটি জাতি হিসেবে আমরা এখন অনেক ঋণগ্রস্ত।"

চেয়ারম্যান আরও জানান, এনবিআর ব্যবসায়ীদের জন্য নিয়মকানুন সহজ করতে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে: ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় কাঁচামাল দ্রুত ছাড়ের অনুমতি, বন্ড অটোমেশন পদ্ধতির প্রবর্তন এবং একটি কার্যকর অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা (Grievance Redress System) চালু করা। তিনি ব্যবসায়ীদের এই নতুন ব্যবস্থাগুলো ব্যবহারের আহ্বান জানান।

ব্যবসায়ীদের কঠোর সমালোচনা এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের সংস্কারের আশ্বাস দেশের রাজস্ব প্রশাসন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচনা করেছে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ