ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

সাবধান! আপনার নামজারি বাতিল হতে পারে এই ১০ কারণে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৭:৩৩:০৩
সাবধান! আপনার নামজারি বাতিল হতে পারে এই ১০ কারণে

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জমি রেজিস্ট্রির পর জমির মালিকানা প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো 'নামজারি' বা মিউটেশন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, অসচেতনতা বা কিছু সাধারণ ভুলের কারণে হাজার হাজার আবেদন বাতিল হচ্ছে প্রতি বছর। ভূমি বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যা সমাধানে ভূমি মালিক ও ক্রেতাদের জন্য ১০টি জরুরি বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, যা নামজারি বাতিলের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

নামজারি বাতিলের ১০টি সাধারণ ভুল এবং আপনার করণীয়:

১. ভুল দাগ নম্বরের ফাঁদ:

জমির পরিচয় নির্ধারণে 'দাগ নম্বর' অপরিহার্য। দলিলে ভুল দাগ নম্বর থাকলে তা রেকর্ড অনুযায়ী না মেলায় নামজারি বাতিল হয়ে যায়।

সমাধান: দলিল প্রস্তুতের পূর্বে খতিয়ান ভালোভাবে দেখে সঠিক দাগ নম্বর নিশ্চিত করুন এবং কোনো ভুল থাকলে দ্রুত সংশোধন করুন।

২. চৌহত্তি বিবরণে অসঙ্গতি:

জমির চৌহত্তি বা চারপাশের সীমানা, মালিকানা বিবরণ, দাগ, মৌজা, সাবেক মালিকের নাম ইত্যাদিতে ভুল থাকলে নামজারির আবেদন গৃহীত হয় না।

সমাধান: অভিজ্ঞ দলিল লেখকের মাধ্যমে দলিল তৈরি করুন এবং প্রতিটি তথ্য নির্ভুলভাবে যাচাই করুন।

৩. ভোটার আইডি ও দলিলের নামের ভিন্নতা:

জমির মালিকের ভোটার আইডি কার্ডে থাকা নাম এবং দলিলে উল্লেখিত নাম হুবহু এক না হলে আবেদন বাতিল হতে পারে।

সমাধান: দলিল ও ভোটার আইডির নাম পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে নিন।

৪. মালিকানা ধারাবাহিকতার ত্রুটি:

জমির সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড অনুযায়ী মালিকানা ইতিহাস বা পূর্ববর্তী মালিকদের ধারাবাহিকতা দলিলে সঠিকভাবে উল্লেখ না থাকলে নামজারি সম্পন্ন হয় না।

সমাধান: কমপক্ষে ২৫ বছরের মালিকানা ইতিহাস যাচাই করে তা দলিলে যথাযথভাবে উল্লেখ করুন।

৫. খতিয়ান নম্বরের অমিল:

দলিলে উল্লেখিত খতিয়ান নম্বর যদি জমির সর্বশেষ রেকর্ডের সঙ্গে না মেলে, তাহলে নামজারি আটকে যেতে পারে।সমাধান: সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী সঠিক খতিয়ান নম্বর দলিলে উল্লেখ করুন।

৬. অন্যের নামে পূর্বে নামজারিকৃত জমি:

একই জমি একাধিকবার বিক্রি হলে অথবা বিক্রেতা তার সীমাবদ্ধ অংশের বাইরে জমি বিক্রি করলে পরবর্তীতে ক্রেতার নামে নামজারি হয় না।

সমাধান: জমি কেনার আগে অবশ্যই নামজারি রেকর্ড এবং দাগ নম্বর যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে নিন।

৭. অর্পিত সম্পত্তি কেনা:

সরকারি নিয়ন্ত্রিত 'অর্পিত সম্পত্তি' ভুলবশত ব্যক্তিগত মালিকানা ভেবে কেউ বিক্রি করলে বা কিনে ফেললে নামজারি বাতিল হবে।সমাধান: জমি কেনার আগে ভূমি অফিস থেকে দাগ অনুযায়ী জমির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।

৮. খাস জমির অংশ বিদ্যমান থাকা:

যদি ব্যক্তিগত জমির মাঝে সরকারি 'খাস জমি'র অংশ থাকে, তাহলে সেই নির্দিষ্ট অংশের নামজারি হবে না।

সমাধান: জমির প্রতিটি অংশ খতিয়ান ও দাগ অনুযায়ী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখুন।

৯. নদীভাঙন বা সরকারি খাস জমির অংশ:

জমির কোনো অংশ প্রাকৃতিক কারণে নদীভাঙনের শিকার হলে বা সরকারি খাস জমিতে পরিণত হলে সেই অংশে নামজারি বাতিল হয়।

সমাধান: জমির ভৌগোলিক এবং আইনি অবস্থা মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে যাচাই করুন।

১০. অংশের অতিরিক্ত জমি বিক্রি:

ওয়ারিশানদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করলে পরবর্তীতে ক্রেতা মারাত্মক সমস্যায় পড়েন এবং নামজারি হয় না।

সমাধান: জমি কেনার আগে বন্টননামা এবং ওয়ারিশ সনদ দেখে বিক্রেতার বিক্রয় ক্ষমতা ভালোভাবে যাচাই করুন।

নামজারি রিজেক্ট হলে করণীয়:

যদি দুর্ভাগ্যবশত আপনার নামজারির আবেদন বাতিল হয়ে যায়, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করুন:

সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে বাতিলের সঠিক কারণ জেনে নিন।

বাতিলের কারণ অনুযায়ী ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নতুন করে আবেদন করুন।

কোনো দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন, এতে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

প্রয়োজনে উপজেলা ভূমি অফিস অথবা একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর আইনি সহায়তা নিন।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

মনে রাখবেন, নামজারি হলো আপনার জমির বৈধ মালিকানার অকাট্য প্রমাণ। এটি ছাড়া ভবিষ্যতে জমির ওপর আপনার আইনি অধিকার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জমি কেনার পূর্বেই দলিল, দাগ, খতিয়ান এবং মালিকানা ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা অপরিহার্য।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ