ঢাকা, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৬ আশ্বিন ১৪৩২

Zakaria Islam

Senior Reporter

বিয়ে করার আগে ৭টি প্রস্তুতি নিতেই হবে, লজ্জা নয় জানতে হবে

ধর্ম ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২১ ২০:২২:৪৪
বিয়ে করার আগে ৭টি প্রস্তুতি নিতেই হবে, লজ্জা নয় জানতে হবে

বিয়ে করার আগে ৭টি প্রস্তুতি নিতেই হবে, লজ্জা নয় জানতে হবে – শায়খ আহমাদুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবন গড়তে বিয়ের আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিয়েকে কেবল আবেগ বা সামাজিক প্রথা হিসেবে না দেখে এর পেছনে থাকা গভীর দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। শায়খ আহমাদুল্লাহ ৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রতিটি বিবাহপ্রত্যাশী নারী-পুরুষের জেনে রাখা প্রয়োজন।

১. নিজেকে সৎ ও পরহেজগার হিসেবে গড়ে তোলা:

বিয়ে করার প্রথম ও প্রধান প্রস্তুতি হলো নিজেকে মুত্তাকী, পরহেজগার (আল্লাহভীরু) এবং পাপ কাজ ও আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকার মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আল্লাহ তায়ালা সাধারণত ভালো মানুষের জন্য ভালো জীবনসঙ্গীই মিলিয়ে দেন। যদিও ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটে, যেমন ফেরাউনের ঘরে আসিয়া এবং নূহ ও লূত (আ.)-এর ঘরে খারাপ স্ত্রী। তাই নিজের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী ফেরেশতার মতো হোক, এমন আশা করলে নিজেকেও সেরূপ ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে হবে।

২. ভালো জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা:

বিয়ে সফল করতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা অপরিহার্য। বিশেষ করে, কুরআনুল কারিমের সূরা ফুরকানের ৭৪ নম্বর আয়াতের শেষ অংশটি বেশি বেশি পাঠ করা উচিত: "হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শস্বরূপ করুন।" এই দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যা, উঠতে-বসতে কোনো সংখ্যা নির্ধারণ না করে বেশি বেশি পাঠ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

৩. দ্বীনদার জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী খোঁজ করা:

আজকাল অনেকে বিয়ের ক্ষেত্রে রূপ, লাবণ্য বা অর্থ-সম্পদকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দ্বীনদারিতা বা ধার্মিকতাকে গুরুত্ব দিতে। জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর মধ্যে দ্বীনদারিতা, তাকওয়া (আল্লাহভীতি), অল্পে তুষ্টি এবং দুনিয়ার মোহ ও লোভ না থাকলে দাম্পত্য জীবন অনেক বেশি সুখী হয়। এটি প্রকৃত সুখ ও সমৃদ্ধির পথ।

৪. জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনীর অধিকার সম্পর্কে জানা:

দাম্পত্য জীবনে একে অপরের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া অহরহ ঘটনা। স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অজান্তেই একে অপরের হক নষ্ট হয়, যা দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ডেকে আনে। তাই বিয়ের আগে থেকেই কুরআন ও হাদিস বর্ণিত জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনীর অধিকারগুলো ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে হবে।

৫. ছেলেদের হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা:

বিয়ের পর স্ত্রী ও পরিবারের ব্যয়ভার বহন করা পুরুষের জন্য আবশ্যক। হালাল উপার্জন মানে লক্ষ কোটি টাকা অর্জন করা নয়, বরং অল্প হলেও হালাল উপার্জনের মাধ্যমে নিজের পরিবারকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা। যদি জীবনসঙ্গিনী অল্পে তুষ্ট থাকেন এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ না রাখেন, তাহলে ছোট উপার্জনেও সুখী হওয়া সম্ভব।

৬. মেয়েদের গৃহস্থালি কাজকর্মে পারদর্শী হওয়া:

বিবাহিত জীবনে মেয়েদের জন্য গৃহস্থালি কাজকর্মে ভালো জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, এসব কাজ না জানার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া ও বনিবনার অভাব দেখা দেয়, যা পারিবারিক সুখ ও শান্তির ঘাটতি তৈরি করে। তাই বিয়ের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মেয়েদের এসব কাজে দক্ষতা অর্জন করা উচিত।

৭. তালাকের মাসায়েল সম্পর্কে জেনে নেওয়া এবং পারিবারিক ব্যবস্থাপনার কোর্স করা:

বিয়ের আগেই তালাকের মাসায়েল (নিয়মকানুন) ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। কোন পদ্ধতিতে তালাক দেওয়া জায়েজ, কোনটা নিষিদ্ধ, কোন সময় তালাক দেওয়া যায় বা যায় না, এবং তালাক কত স্পর্শকাতর বিষয় – এসব জানা দোষণীয় নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তালাকের পর মানুষ আফসোস করে বলে যে, তারা এসব জানতো না।

এছাড়াও, পারিবারিক ব্যবস্থাপনা এবং প্যারেন্টিং সম্পর্কিত কোর্সগুলো নারী ও পুরুষ উভয়েরই করা প্রয়োজন। এই কোর্সগুলোর মাধ্যমে পারিবারিক বিধি-বিধান, শ্বশুরবাড়ির সাথে সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক কর্তব্য এবং সন্তান লালন-পালনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার পথ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যায়।

এই প্রস্তুতিগুলো গুরুত্বের সাথে নিলে আল্লাহ তায়ালা সুখী ও শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবন উপহার দেবেন বলে শায়খ আহমাদুল্লাহ আশা প্রকাশ করেছেন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ