ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২

Zakaria Islam

Senior Reporter

এনবিআর-বিএসইসি'র ভুল সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজারে বিপর্যয়

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২২ ১৬:২৭:৪০
এনবিআর-বিএসইসি'র ভুল সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজারে বিপর্যয়

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে পতন থামছেই না। গত চার কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭২ পয়েন্ট হারিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ডিএসইএক্স আরও প্রায় ৪৫ পয়েন্ট কমে ৫,৩৩৭ পয়েন্টে নেমে আসে, যার ফলে চার দিনে বাজার মূলধন থেকে প্রায় ৮,৫২৭ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এদিন লেনদেন নেমে এসেছে ৫৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা এই পরিস্থিতিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর সমন্বয়হীনতার ফল হিসেবে দেখছেন, যা বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

এনবিআর-এর চিঠি ও বিএসইসি'র দ্রুত পদক্ষেপ: বাজারে হঠাৎ আতঙ্ক

বর্তমান অস্থিরতার সূত্রপাত হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি অপ্রত্যাশিত চিঠি থেকে। গত ২৫ আগস্ট এনবিআর বিএসইসি'র কাছে ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাশ গেইন করা বিনিয়োগকারীদের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি পাঠায়। উদ্বেগজনকভাবে, বিএসইসি কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই বা সতর্কতা ছাড়াই গত ১৪ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে পাঠিয়ে দেয়। এই আকস্মিক উদ্যোগ বাজারে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন।

নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার দৃষ্টান্ত

এই ঘটনায় বাংলাদেশের দুটি প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিক্রিয়াতেও সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট ছিল। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) দ্রুত ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে গ্রাহকের পোর্টফোলিও জমা দিতে নির্দেশ দিলেও, তীব্র সমালোচনার মুখে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে। অন্যদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা বিএসইসি'র সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো পদক্ষেপ নেবে না। এই ভিন্নমুখী প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবকেই তুলে ধরে।

বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: 'দায়ভার নিয়ন্ত্রকদেরই নিতে হবে'

একটি ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এটি বাজারে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। এনবিআর ব্যক্তিগত পোর্টফোলিওর মতো অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য চেয়েছে, আর বিএসইসি কোনো যাচাই না করেই তা বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছে। এর দায়ভার সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রকদেরই নিতে হবে।" তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে, এমন ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিএসইসি'র অভ্যন্তরীণ দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন

বিএসইসি'র একাধিক অভ্যন্তরীণ সূত্র স্বীকার করেছে যে, কমিশনের একজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এনবিআর-এর চিঠিটি এক্সচেঞ্জগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' কাজের জন্য কমিশনের ভেতরেই অসন্তোষ রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের অসতর্ক পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা বাজারের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

আস্থার সংকট ও নতুন কর নীতি: বাজারের চ্যালেঞ্জ

উল্লেখ্য, অর্থবছর ২০২৪ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাশ গেইনের উপর ১৫% কর আরোপ করা হয়েছে। তবে, কর পরিপালন যাচাইয়ের প্রক্রিয়া যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা বাজারের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনবিআর-এর চিঠি এবং বিএসইসি'র অসতর্ক ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটকে আরও গভীর করছে।

বাজার কি শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে?

তবে, বাজার বিশ্লেষকরা বর্তমান অস্থিরতাকে অস্থায়ী বলে মনে করছেন। তাদের মতে, বাজার ইতিমধ্যেই তার সর্বনিম্ন পর্যায় অতিক্রম করেছে এবং এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। দেশের শেয়ারবাজারের মূল শক্তি এখনও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে, যারা সূচকের স্বাভাবিক পুনর্গঠন এবং স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাজারকে পুনরায় সচল করতে সক্ষম। এছাড়াও, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়ার ইতিবাচক অগ্রগতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে, যা শিগগিরই বাজারকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ