ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

উৎপাদন বন্ধ ৩০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ ডিএসইর, বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ০৫:১৯:৫৮
উৎপাদন বন্ধ ৩০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ ডিএসইর, বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এক যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে উৎপাদন খাতের বন্ধ হয়ে যাওয়া ৩০টি কোম্পানির একটি বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। এই কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজার থেকে উল্লেখযোগ্য তহবিল সংগ্রহ করলেও দীর্ঘদিন ধরে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।

ডিএসইর এই উদ্যোগটি মূলত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য হলো, বন্ধ কোম্পানিগুলোকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন গুজব ও কারসাজি থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করা। এই তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারবেন।

নতুন সংযোজন: হ্যামিদ ফ্যাব্রিক্স ও রহিমা ফুড

প্রকাশিত তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে টেক্সটাইল খাতের কোম্পানি হ্যামিদ ফ্যাব্রিক্স। গত ২২ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে পর্যাপ্ত গ্যাস চাপের অভাবে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। সিএনজি ও এলএনজি ব্যবহারের চেষ্টা করেও পরিস্থিতি উন্নত হয়নি। ফলস্বরূপ, লেবার আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ লেবার রুলস ২০১৫ এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী গত ২২ জুন থেকে ফ্যাক্টরিটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। গ্যাস সংকট সমাধানের পরই উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে বলে কোম্পানি জানিয়েছে।

এর আগে গত ১২ আগস্ট রহিমা ফুড কর্পোরেশনও তাদের কেশু বাদাম প্রক্রিয়াকরণ এবং নারকেল তেল উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বাজারে প্রত্যাশিত আকার গ্রহণ করতে না পারার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা এটিকে একটি "শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা" হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতা নিশ্চিত করার জন্য উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী বন্ধের চিত্র

ডিএসইর প্রকাশিত তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি ২০০২ সাল থেকেই বন্ধ অবস্থায় রয়েছে, যা তাদের দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তা নির্দেশ করে।

এছাড়াও, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর নির্দেশনায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় বারাকা পাওয়ার এবং জাহীণ স্পিনিং মিলস-কে 'জেড' ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত বন্ধ কোম্পানির তালিকা

ডিএসইর প্রকাশিত তালিকায় উল্লিখিত কোম্পানিগুলো হলো: অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, অ্যারামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বারাকা পাওয়ার, দুলামিয়া কটন, এমারাল্ড অয়েল, ফ্যামিলি টেক্স (বিডি), জিবিবি পাওয়ার, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং মিলস, মিথুন নিটিং, নিউ লাইন ক্লথিংস, নর্দার্ন জুট, নুরানি ডায়িং, প্রাইম টেক্সটাইল, আরএসআরএম, রেজেন্ট টেক্সটাইল, সুহ্নিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, টাং হাই নিটিং, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস। এছাড়াও, দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান শ্যাম্পুর সুগার মিলস ও উসমানিয়া গ্লাস শীট ফ্যাক্টরিজ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

বিনিয়োগকারীদের সচেতনতাই মূল লক্ষ্য

এ বিষয়ে ডিএসইর একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বলেন, "বন্ধ কোম্পানির তালিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা। কারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা না জেনে গুজবের শিকার হয়ে শেয়ার দরের ওঠানামায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।"

তিনি আরও বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীরা এই তথ্য থেকে বঞ্চিত। এখন প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা নিজের দায়িত্বে এবং ঝুঁকিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন।" এই পদক্ষেপ শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ