ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

জমির খতিয়ানে ভুল? দ্রুত সমাধান করুন, বাঁচান অর্থ ও সময়!

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ০৯:৫৩:৪১
জমির খতিয়ানে ভুল? দ্রুত সমাধান করুন, বাঁচান অর্থ ও সময়!

জমির খতিয়ানে ভুল? জেনে নিন আইনি সমাধানের সহজ উপায়

বাংলাদেশের বহু জমি মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার প্রধান কারণ হলো জমির খতিয়ানে ভুল। নামের বানানে ত্রুটি, দাগ বা অংশের গরমিল, এমনকি প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের নামে খতিয়ান তৈরি—এসবই সাধারণ ঘটনা। তবে সুসংবাদ হলো, আইন অনুযায়ী এসব সমস্যার সহজ ও নির্ভরযোগ্য সমাধান বিদ্যমান, যা আপনার ভূমি অধিকার সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।

খতিয়ানে ভুল সংশোধনের প্রাথমিক ধাপ: 'মিস কেস' আবেদন

ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২১ সালের ২৯ জুলাই প্রকাশিত গেজেট (রেকর্ড সংশোধন পরিপত্র নং ৩৪৩) অনুযায়ী, খতিয়ানে কোনো ভুল থাকলে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কাছে 'মিস কেস' দায়ের করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে সহজ:

আবেদন প্রক্রিয়া: একটি সাধারণ সাদা কাগজে আবেদনপত্রটি লিখতে হবে।

কোর্ট ফি: আবেদনের সাথে ২০ টাকার কোর্ট ফি জমা দিতে হয়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির দলিল এবং পূর্বের খতিয়ানের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি সংযুক্ত করতে হবে।

এই পদ্ধতিটি State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (ধারা ১৪৩) এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ (ধারা ২৩(৩)) দ্বারা অনুমোদিত।

প্রতারণার মাধ্যমে খতিয়ান অন্যের নামে হলে করণীয়

যদি কোনো ব্যক্তি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আপনার জমি নিজের নামে খতিয়ানভুক্ত করে থাকেন, তবে আইনি প্রতিকার পাওয়া সম্ভব:

এসিল্যান্ড বরাবর আবেদন: সরাসরি এসিল্যান্ড বরাবর একটি 'মিস কেস' আবেদন জমা দিতে হবে।

যাচাই-বাছাই ও শুনানি: এসিল্যান্ড কার্যালয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করবে এবং উভয় পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকবে।

মালিকানা পুনরুদ্ধার: সব প্রমাণ এবং শুনানি শেষে প্রকৃত মালিকের নামে খতিয়ান ফেরত দেওয়া হয়।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর ২৩(৪) ধারা কার্যকর হয়, যা আসল মালিকের স্বার্থ রক্ষা করে।

খারিজ খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে গেলে কী করবেন?

আপনার খারিজ খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে গেলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। নতুন কপি সংগ্রহের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে:

থানায় জিডি: প্রথমে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।

এসিল্যান্ড অফিসে আবেদন: জিডির কপি এবং ২০ টাকার কোর্ট ফি সহ এসিল্যান্ড অফিসে আবেদন জমা দিতে হবে।

নতুন খতিয়ান ইস্যু: যাচাই-বাছাই শেষে প্রমাণসাপেক্ষে নতুন খতিয়ান ইস্যু করা হবে।

ফি: নতুন খতিয়ান সংগ্রহের জন্য ১০০ টাকা (ডিসিআর রশিদসহ) ফি প্রযোজ্য।

অন্যান্য জরিপ খতিয়ান (S.A., C.S., R.S., B.S.) হারিয়ে গেলে করণীয়

যদি আপনার S.A., C.S., R.S., বা B.S. খতিয়ান হারিয়ে যায়, তবে সেগুলোর অনুলিপি সংগ্রহ করা সম্ভব:

জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে আবেদন: মৌজা নম্বর এবং খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে আবেদন করতে হবে।

প্রক্রিয়ার সময়সীমা ও কিছু জরুরি তথ্য

সাধারণত, নামজারি সংশোধনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে:

ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রতিবেদন: আবেদন জমা পড়ার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিস একটি প্রতিবেদন তৈরি করে।

শুনানি: সংশ্লিষ্ট পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকা হয়।

সংশোধিত খতিয়ান প্রদান: কোনো বৈধ আপত্তি না থাকলে সংশোধিত খতিয়ান প্রদান করা হয়।

বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ ও আশার আলো

সরকার খতিয়ান সংশোধনের প্রক্রিয়া সহজ করলেও, বাস্তবে অনেক সময় ভূমি অফিসে অনীহা দেখা যায় এবং আবেদনকারীদের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা প্রত্যাশা করেন, সরকারের ঘোষিত সহজ প্রক্রিয়া যেন সঠিকভাবে কার্যকর হয় এবং ভূমি অফিসে বারবার হয়রানি থেকে মানুষ মুক্তি পায়। এটি ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনবে এবং জনগণের আস্থা বাড়াবে।আপনার জমির অধিকার সুরক্ষায় আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন। প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী):

জমির খতিয়ানে ভুল হলে কী করব?

উত্তর: জমির খতিয়ানে ভুল থাকলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ডের কাছে 'মিস কেস' আবেদন করতে হয়।

খারিজ খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে গেলে কী করতে হবে?

উত্তর: প্রথমে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে জিডি কপি সহ এসিল্যান্ড অফিসে আবেদন করতে হবে।

প্রতারণার মাধ্যমে খতিয়ান অন্যের নামে হলে আইনি সমাধান কী?

উত্তর: এসিল্যান্ড বরাবর মিস কেস আবেদন করে যাচাই-বাছাই ও শুনানির মাধ্যমে প্রকৃত মালিকের নামে খতিয়ান ফেরত পাওয়া যায়।

খতিয়ান সংশোধনে সাধারণত কতদিন সময় লাগে?

উত্তর: সাধারণত নামজারি বা খতিয়ান সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩০-৪৫ দিন সময় লাগে।

মিস কেস আবেদনের জন্য কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন?

উত্তর: জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির দলিল, পূর্বের খতিয়ান এবং ২০ টাকার কোর্ট ফি সহ সাদা কাগজে আবেদন করতে হয়।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ