ঢাকা, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

নতুন নীতি: বাংলালিংক-রবিকে শেয়ার ছাড়তে হবে ১৫%, রবিকে ৫%?

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ২৩:৩০:০৩
নতুন নীতি: বাংলালিংক-রবিকে শেয়ার ছাড়তে হবে ১৫%, রবিকে ৫%?

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে সদ্য অনুমোদিত 'টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং' শীর্ষক নীতিমালা। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন এবং গেজেট আকারে প্রকাশের পর, এই নীতিমালা বিদেশি বিনিয়োগের সীমা নির্ধারণ, লাইসেন্স কাঠামো সরলীকরণ এবং অবকাঠামো ভাগাভাগি বাধ্যতামূলক করার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে দেশের টেলিকম ল্যান্ডস্কেপে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে, বিশেষত বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য।

বিদেশি মালিকানার সীমা হ্রাস: দেশীয় বিনিয়োগের সুযোগ

নীতিমালার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোতে বিদেশি মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা ৮৫ শতাংশে কমিয়ে আনা। এর আগে যেখানে শতভাগ বিদেশি মালিকানা অনুমোদিত ছিল, এখন সেই জায়গায় ১৫ শতাংশ শেয়ার দেশীয় অংশীদারদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে, বাংলালিংককে তাদের ১৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে এবং রবিকে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিতে হবে। গ্রামীণফোন যেহেতু ইতোমধ্যেই দেশীয় অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে, তাই তাদের ওপর এই পরিবর্তনের সরাসরি কোনো প্রভাব পড়বে না। সরকারের মতে, এই পদক্ষেপ দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশের শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অবকাঠামো বিনিয়োগে নতুন নিয়ম: টাওয়ার ও ফাইবার অপটিক্সে দেশীয় নিয়ন্ত্রণ

নীতিমালায় ফাইবার অপটিক্স, টাওয়ার এবং অন্যান্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা হয়েছে। তবে এখানেও বিদেশি শেয়ারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে—টাওয়ার ও ফাইবার পরিচালনায় সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ সেবায় ৪৯ শতাংশ। এটি একদিকে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছে, অন্যদিকে কৌশলগত অবকাঠামোতে দেশীয় মালিকানার শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিত করছে।

লাইসেন্স কাঠামোর সরলীকরণ: ২৬ থেকে ৪ ক্যাটেগরি

আগে যেখানে ২৬ ধরনের আলাদা লাইসেন্স ছিল, এখন তা কমিয়ে চারটি মূল লাইসেন্স ক্যাটেগরির অধীনে আনা হয়েছে। এগুলো হলো: অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার, ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেক্টিভিটি প্রোভাইডার, ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি প্রোভাইডার এবং নন-টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার। এছাড়া, কিছু বিশেষ টেলিকম-এনাবলড সেবার জন্য আলাদা তালিকাভুক্তি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই সরলীকরণ প্রক্রিয়া লাইসেন্স প্রাপ্তি ও পরিচালনায় স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উদ্যোক্তাদের শঙ্কা বনাম সরকারের প্রতিশ্রুতি

এই নীতিমালা নিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই পরিবর্তনের ফলে শতাধিক দেশীয় লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসা হারাবে এবং বিদেশি অপারেটররা বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করবে। তাদের অভিযোগ, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

তবে সরকার জোর দিয়ে বলছে, গ্রাহকের স্বার্থই এখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। নতুন নীতিমালায় অবকাঠামো ভাগাভাগি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবার মান উন্নত করা এবং খরচ কমিয়ে আনা। আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারকে ফাইবার নেটওয়ার্কে যুক্ত করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উপকূলীয় ও দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মতো জনকল্যাণমূলক লক্ষ্যও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পরিবেশ ও সাইবার নিরাপত্তা: একীভূত উন্নয়ন

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ এবং সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও নীতিমালায় বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। টাওয়ার ও ডেটা সেন্টারে সৌরশক্তির ব্যবহার, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ এবং সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। এটি একটি টেকসই ও নিরাপদ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার প্রতি সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ: সাফল্যের চাবিকাঠি

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সতর্ক করে বলছেন, নীতিমালা প্রণয়ন যতটা সহজ, কার্যকর বাস্তবায়ন ততটাই চ্যালেঞ্জিং। অতীতে অনেক নীতিমালা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। তাই, নতুন এই নীতিমালার সফল বাস্তবায়নই গ্রাহক, সরকার এবং উদ্যোক্তা—সবার জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এই নীতিমালা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং একটি শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে এমনটাই প্রত্যাশা।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ