ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে ৫ ব্যাংকের রেকর্ড উত্থান: বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ৩০ ০৯:০৬:৫০
শেয়ারবাজারে ৫ ব্যাংকের রেকর্ড উত্থান: বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি!

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে (সোমবার) এক অভূতপূর্ব চিত্র দেখা গেছে। প্রায় মাসব্যাপী ধারাবাহিক পতনের পর এদিন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক—এই পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার একযোগে বিক্রেতা সংকটে পড়ে হল্টেড হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের শেয়ার সর্বোচ্চ সার্কিট ব্রেকারে উঠে বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

আগের চিত্র: বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ

গত আগস্টে এই পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে একটি একক ইসলামী ব্যাংক গঠনের ঘোষণা আসার পর থেকেই শেয়ারগুলো তীব্র লোকসানের মুখে পড়েছিল। আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক্সিম ব্যাংকের দর কমেছিল ৫৪.৬৮%, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৫৭%, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬৩.৫২%, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৫৫% এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের ৫০%। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী একীভূতকরণ বা বিলুপ্তির ক্ষেত্রে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট বিধান না থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক বিক্রির প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। এর ফলে শেয়ারবাজারে এই ব্যাংকগুলোর দরপতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছিল।

নতুন আশাবাদ: ক্ষতিপূরণের সম্ভাবনা

তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশাবাদ দেখা দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা দেওয়ার উপায় খুঁজছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই ইতিবাচক খবরটি সোমবারের শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর হল্টেড হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। ডুয়া নিউজ, শেয়ারনিউজ-সহ কয়েকটি নিউজ পোর্টাল বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ ও নতুন ব্যাংকের রূপরেখা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, কীভাবে এই ব্যাংকগুলোর ডিলিস্টিং (তালিকাচ্যুতি) পরিচালনা করা হবে এবং শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ নিশ্চিত করা হবে—সেই বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর সাথে আলোচনা চলছে। ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ অনুসারে, বর্তমান পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে এবং একীভূত নতুন প্রতিষ্ঠানকে একটি নতুন লাইসেন্স দেওয়া হবে। এই পদক্ষেপগুলো স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

একীভূতকরণের পর, নতুন ব্যাংকটি দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে। এর মোট সম্পদের মূল্য হবে আনুমানিক ২.২০ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকার, ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ফান্ড এবং বহুজাতিক ঋণদাতাদের থেকে প্রাপ্ত ৩৫,০০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকবে। এই বিশাল মূলধন এবং সম্পদ নতুন ব্যাংকটিকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম করবে।

এই খবরটি শেয়ারবাজারের পাশাপাশি সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসার পাশাপাশি, একীভূত নতুন ব্যাংকটি দেশের ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ