ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক: নিষ্ক্রিয় ৬২ হাজার বিও হিসাব, বাজার ছাড়ছে মানুষ

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১৪:০৬:১৫
বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক: নিষ্ক্রিয় ৬২ হাজার বিও হিসাব, বাজার ছাড়ছে মানুষ

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের অস্থিরতার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। চলতি পঞ্জিকা বছরের গত ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) প্রায় ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়েছেন। একই সময়ে আরও প্রায় ৩২ হাজার বিনিয়োগকারীর বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব শেয়ারশূন্য হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে, এই ৯ মাসে মোট ৬২ হাজার বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর তথ্যে উঠে এসেছে।

বিও হিসাবে বড় পতন

সিডিবিএল-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে মোট বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৫২টি। যা গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ২২৭টিতে। অর্থাৎ, এই ৯ মাসে বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৩০ হাজার ২২৫টি। এটি পুঁজিবাজারের জন্য একটি উদ্বেগজনক চিত্র।

শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের বৃদ্ধি

শুধুমাত্র বিনিয়োগকারী কমে যাওয়াই নয়, শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে শেয়ার রয়েছে এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৯টি, যেগুলোতে মোট ১০ হাজার ১৫৬ কোটি শেয়ার ও ইউনিট ছিল যার বাজার মূল্য ছিল ৩ লাখ ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ার রয়েছে এমন বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯ হাজার ২০৭টিতে। এসব হিসাবে মোট ১০ হাজার ২৫৭ কোটি শেয়ার ও ইউনিট থাকলেও, সেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭৪টি। এই সংখ্যা গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫৯টিতে। অর্থাৎ, ৯ মাসে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব বেড়েছে ৩১ হাজার ৮৮৫টি। এই চিত্র বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবকেই তুলে ধরে।

বাজার বিমুখতার কারণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি একটি আতঙ্ক বিরাজমান। তাছাড়া, বাজারে আস্থা বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থারও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে নতুন কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) না আসায় অনেক বিনিয়োগকারী বাজারবিমুখ হয়ে বেরিয়ে গেছেন।"

তিনি আরও যোগ করেন, "নতুন আইপিও না আসায় বিনিয়োগের সুযোগ কমেছে এবং পুরনো শেয়ারের প্রতি আগ্রহও কমছে। এই পরিস্থিতি নতুন বিনিয়োগকারী টানতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদেরও হতাশ করছে।"

আস্থা ফেরাতে পদক্ষেপের আহ্বান

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, "বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের বার্ষিক ফি কমানো হয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখতে সহায়তা করবে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, "বাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এগুলোর প্রতিফলন আসতে শুরু করলে বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা বৃদ্ধি পাবে।"

তিনি প্রত্যাশা করেন যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই উদ্যোগগুলো বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।

পুরুষ, নারী এবং বিদেশিদের বিও হিসাবে পতন

সিডিবিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শেষে মোট ১৬ লাখ ৩২ হাজার ২২৭টি বিও হিসাবের মধ্যে পুরুষ বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭৬টি। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৮টি। অর্থাৎ, ৯ মাসের ব্যবধানে পুরুষ বিও হিসাব কমেছে ১৯ হাজার ৭২২টি।

আলোচ্য ৯ মাসে নারী বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ১০ হাজার ৭৩৫টি। গত ডিসেম্বর শেষে নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৫৫টি। গত সেপ্টেম্বর শেষে এটি কমে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২০টি হয়েছে।

বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিও হিসাবেও পতন দেখা গেছে। আলোচ্য সময়ে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিও হিসাব কমেছে ২ হাজার ৮৯০টি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা কমে হয়েছে ৪৩ হাজার ৮০১টি, যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪৬ হাজার ৬৯১টি।

সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা হ্রাস এবং বিও হিসাবের নিষ্ক্রিয়তা বাজারের দুর্বলতাকেই নির্দেশ করে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারকে স্থিতিশীল করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। বিশেষ করে, নতুন আইপিও বাজারে আনা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ