ঢাকা, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারের ৩৫ ছক্কায় ৩১৪! ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড়

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৫ ১১:৩০:৪৫
ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারের ৩৫ ছক্কায় ৩১৪! ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড়

অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার হারজাস সিং। শনিবার সিডনি ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ওয়েস্টার্ন সাবার্বসের হয়ে সীমিত ওভারের ম্যাচে তিনি খেলেছেন এক অবিশ্বাস্য ইনিংস। মাত্র ১৪১ বলে ৩১৪ রানের এক ঝড়ো ত্রিশতক হাঁকিয়ে তিনি ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছেন। তার এই ইনিংসে ছিল রেকর্ড ৩৫টি বিশাল ছক্কা এবং ১২টি চারের মার।

গ্রেড ক্রিকেটে প্রথম ত্রিশতক:

হারজাস সিংয়ের এই ইনিংসটি গ্রেড লেভেলের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রথমবার কোনো ক্রিকেটারের ত্রিশতক করার রেকর্ড। এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার ফার্স্ট-গ্রেড ক্রিকেটে ত্রিশতক করা মাত্র তিন ব্যাটারের এক বিরল ও মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। এই তালিকায় তার আগে রয়েছেন ফিল জ্যাকস (৩২১) এবং ভিক্টর ট্রাম্পার (৩৩৫)।

ভারতীয় শিকড় এবং আন্তর্জাতিক পরিচয়:

সিডনিতে জন্ম নেওয়া এই তরুণ ক্রিকেটারের শিকড় ভারতের চণ্ডীগড়ে। তার বাবা-মা ২০০০ সালে ভারত থেকে সিডনিতে পাড়ি জমান। হারজাস এর আগেও নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। ২০২৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ৬৪ বলে ৫৫ রান করে দলের সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছিলেন, যা অস্ট্রেলিয়াকে ২৫৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ গড়তে সাহায্য করেছিল।

হারজাসের জবানবন্দি:

রেকর্ড গড়া ইনিংস শেষে ফক্স ক্রিকেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হারজাস নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন, "নিশ্চয়ই এটা আমার জীবনের সবচেয়ে নিখুঁত ব্যাটিং। অফ সিজনে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি, আর আজ সেটা সফল হতে দেখে অসাধারণ লাগছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "গত এক-দুই মৌসুম নিজের খেলায় মনোযোগ দিতে পারিনি। এবার পুরোপুরি নিজের পারফরম্যান্সে মন দিয়েছি, আর তার ফল পাচ্ছি।"

ইনিংসের বিস্তারিত বর্ণনা:

প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ওয়েস্টার্ন সাবার্বসের ওপেনার নিকোলাস কাটলার ও জোশুয়া ক্লার্ক ৭০ রানের জুটি গড়ে দলের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেন। এরপর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে নামেন হারজাস সিং। প্রথম ৫ বলে তিনি কোনো রান করতে পারেননি, কিন্তু ষষ্ঠ বলেই জো ডেভিসকে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে মেরে শুরু করেন তার বিধ্বংসী ব্যাটিং।

এটি ছিল তার আগমনের মাত্র একটি ঝলক। এরপর তিনি নিয়মিতভাবে বাউন্ডারি খুঁজতে শুরু করেন। ১৮তম ওভারে হান্টার হলের বিরুদ্ধে ১৪ রান নিয়ে তিনি ছন্দে আসেন। ২০তম ওভারে ৩৩ বল খেলে হারজাস তার হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এরপর কিছুটা ধীরগতিতে খেলেন এবং পরবর্তী শতক পর্যন্ত ৪১ বল নেন। কিন্তু এরপরই তিনি হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। পরবর্তী দুই ওভারেই ডেভিস এবং হলকে তছনছ করেন, যেখানে পাঁচটি ছক্কা এবং একটি চার মারেন। এরপর থমাস মুলেনের ৩৭তম ওভারে তিনি একাই পাঁচটি ছক্কা হাঁকান।

১০৩ বল খেলে হারজাস ২০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার দ্বিতীয় শতকটি আসে মাত্র ২৯ বলে! কিন্তু তিনি এখানেই থামেননি। শেষ দশ ওভারেও চালিয়ে যান ব্যাটিং তাণ্ডব। ১২৯ বল খেলে ২৮৩ রানে যখন তিনি শেষ ওভারে, তখন প্রথম তিনটি বলেই তিনটি ছক্কা মেরে ৩০১ রানে পৌঁছান। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৪১ বল খেলে ৩১৪ রানে আউট হন, যার মধ্যে ছিল ৩৪টি ছক্কা এবং ১২টি চার। তার এই ইনিংসে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি থেকে আসে মোট ২৫২ রান।

হারজাস সিংয়ের এই ইনিংসটি নিঃসন্দেহে ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এবং বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এক অবিশ্বাস্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ