
MD. Razib Ali
Senior Reporter
মৃত্যুও হতে পারে কাঁচা ছোলা খেয়ে! কখন ও কী খাবেন না জানুন

কাঁচা ছোলার উপকারিতা: সঠিক খাদ্যাভ্যাস সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি, ভুল উপায়ে হতে পারে মারাত্মক বিপদ!
স্বাস্থ্যকর খাদ্যের তালিকায় কাঁচা ছোলার অবস্থান শীর্ষস্থানীয়। এটি যেমন শারীরিক বিভিন্ন জটিল রোগ প্রতিরোধে সক্ষম, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে, কাঁচা ছোলা গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা অত্যাবশ্যক। বিশেষত, কিছু খাবারের সাথে কাঁচা ছোলার মিশ্রণ মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এমনকি অকাল মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, কাঁচা ছোলা খাওয়ার আগে ও পরে নির্দিষ্ট কিছু খাবার পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি।
কাঁচা ছোলার অসামান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা:
সঠিকভাবে কাঁচা ছোলা গ্রহণ করলে আপনার শরীর নিম্নলিখিত উপকারিতাগুলো পেতে পারে:
হৃদরোগ প্রতিরোধ: নিয়মিত কাঁচা ছোলা সেবনে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং উচ্চ কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
ক্যান্সার ও হজমশক্তি: এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। (তবে, যাদের দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, তাদের আগে এই সমস্যা নিরাময় করে তারপর কাঁচা ছোলা শুরু করা উচিত)।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা ছোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
যৌনশক্তি বৃদ্ধি: এটি যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে এবং পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
মানসিক শান্তি: কাঁচা ছোলা মনকে শান্ত রাখে, অস্থিরতা ও চঞ্চলতা হ্রাস করে।
ব্যথা নিরাময়: হাত-পায়ের তালু জ্বালাপোড়া, মেরুদণ্ডের ব্যথা, হাত-পায়ের বাত ব্যথা সহ বিভিন্ন ধরনের দৈহিক ব্যথা উপশমে এটি কার্যকর।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
কৃমিনাশক: কাঁচা ছোলা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে এবং পেটে কৃমি হওয়া প্রতিরোধ করে।
কাঁচা ছোলা কাদের জন্য ক্ষতিকর?
কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থায় কাঁচা ছোলা এড়িয়ে চলা বা সতর্কতার সাথে গ্রহণ করা উচিত:
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড ও ক্রিয়েটিনিন: যাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বা ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেশি, তাদের কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত নয়।
হজমের সমস্যা: কাঁচা ছোলা খাওয়ার পর যদি অতিরিক্ত গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম বা ডায়রিয়া হয়, তবে বুঝতে হবে আপনার শরীর এটি হজম করার জন্য উপযুক্ত নয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: যারা ওজন কমাতে চান, তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা ছোলা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা ভালো, কারণ এতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে।
কাঁচা ছোলা গ্রহণের সঠিক নিয়মাবলী:
কাঁচা ছোলার সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করুন:
ভিজিয়ে রাখা: এক মুঠো কাঁচা ছোলা পরিষ্কার ও পানযোগ্য পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
সকালের রুটিন: সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম লেবু পানি পান করুন। এরপর নামাজ (যদি প্রযোজ্য হয়) পড়ে ব্যায়াম বা যোগাসন করুন। পেট পরিষ্কার হওয়ার পর ভিজিয়ে রাখা ছোলাগুলো ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
খালি পেটে পরিহার: একদম খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাবেন না।
অতিরিক্ত সংযোজন (ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নয়): যারা ডায়াবেটিস রোগী নন, তারা ছোলার সাথে ৫০-৬০ গ্রাম পুরোনো গুড় অথবা দুই চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এক চিমটি কালোজিরাও যোগ করা যেতে পারে।
কাঁচা ছোলার সাথে যে তিনটি খাবার কখনোই খাবেন না:
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, কাঁচা ছোলা খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে বা পরে নিম্নলিখিত তিনটি খাবার পরিহার করা অত্যাবশ্যক। এই খাবারগুলো একসাথে খেলে শরীরে মারাত্মক বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে:
দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার:
কেন এড়িয়ে চলবেন: কাঁচা ছোলা খাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে বা পরে দুধ, দই, ছানা, পনির বা অন্য কোনো দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ঝুঁকি: এই মিশ্রণ হজমে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে, যেমন - অতিরিক্ত গ্যাস, অ্যাসিডিটি এবং এমনকি হার্ট অ্যাটাকের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। এটি বাত ও পিত্ত রোগও বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা হতে পারে।
আচার ও ভিনেগার-জাতীয় খাবার:
কেন এড়িয়ে চলবেন: যেকোনো ধরনের আচার বা ভিনেগার, যেমন – আপেল সিডার ভিনেগার, সাদা সিরকা ভিনেগার বা নারকেলের ভিনেগার, কাঁচা ছোলার সাথে গ্রহণ করা উচিত নয়।
ঝুঁকি: আচারে ব্যবহৃত ভিনেগার বা নিজেই ভিনেগার তীব্র অ্যাসিডিক হওয়ায় কাঁচা ছোলার সাথে মিশে হজম প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং পেটের অস্বস্তি বাড়ায়।
করলা বা উচ্ছে:
কেন এড়িয়ে চলবেন: করলা বা উচ্ছে রক্ত পরিষ্কার করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও কাঁচা ছোলার সাথে এটি গ্রহণ করা মারাত্মক ক্ষতিকর।
ঝুঁকি: যদিও করলা এবং কাঁচা ছোলা উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তাদের সংমিশ্রণ দেহের জন্য বিষাক্ত হতে পারে এবং ত্বকের অ্যালার্জি বা র্যাশ সৃষ্টি করতে পারে। এই দুটি খাবার একসাথে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই, করলার জুস বা করলা খাওয়ার ন্যূনতম দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কাঁচা ছোলা গ্রহণ করা উচিত।
মনে রাখবেন, ভাজা ছোলা বা তেল-মসলায় রান্না করা ছোলা কাঁচা ছোলার মতো একই উপকারিতা দেয় না এবং কিছু ক্ষেত্রে তা ক্ষতিকরও হতে পারে।
কাঁচা ছোলা একটি পুষ্টিকর খাদ্য। তবে এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে এবং কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সঠিক নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। ভুল খাদ্যাভ্যাস মারাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই, কাঁচা ছোলা খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি এবং কোন খাবারগুলোর সাথে এটি মেশানো উচিত নয়, তা সম্পর্কে সচেতন থাকা অপরিহার্য। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও সুস্থ থাকতে সহায়তা করুন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
আল-মামুন/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- চলছে বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড নারী বিশ্বকাপ ম্যাচ: টস শেষ, লাইভ দেখবেন যেভাবে
- বাংলাদেশ বনাম হংকং: কখন, কোথায়, কবে ও কিভাবে দেখবেন লাইভ
- বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করলো ৩ কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা: বিএসইসি চেয়ারম্যানের ৭টি সাহসী পদক্ষেপ!
- শেয়ারবাজারের নীরব বিপ্লব: বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় বিএসইসি!
- কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড নারী বিশ্বকাপ ম্যাচ: লাইভ দেখবেন যেভাবে
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কারসাজির গন্ধ! তদন্তে বিএসইসি
- ৭ শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ঢল
- শেয়ারবাজারে নতুন উদ্দীপনা: 'বুল রান'-এর ঝলক, তবে সতর্কতার মিশ্রণ
- আজ বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড নারী বিশ্বকাপ ম্যাচ: লাইভ দেখার সহজ উপায়
- নতুন বেতন কাঠামোতে নতুন বড় চমক: গ্রেড কম, বেতন বেশি!
- আজ বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ: কখন, কোথায় ও কিভাবেন দেখবেন লাইভ
- শেয়ারবাজারে 'স্বাভাবিক সংশোধন', কমেছে সূচক তবে বেড়েছে লেনদেন
- আজকের খেলার সময়সূচি:বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান
- এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম কমল! ভোক্তাদের জন্য সুখবর, জানুন নতুন মূল্য