
MD. Razib Ali
Senior Reporter
বৈধ দলিল ও দখল সত্ত্বেও জমি হারানোর ঝুঁকি: জেনে নিন ৩ কারণ ও প্রতিকারের উপায়

জমির মালিকানা নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, বৈধ দলিল এবং জমির দখল থাকলেই তাদের মালিকানা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। কিন্তু বাস্তবে এটি সব ক্ষেত্রে সঠিক নয়। সম্প্রতি এক ভিডিওতে আইনজীবী মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এই ধারণার ভুল প্রমাণ করে সতর্ক করেছেন যে, আইনি ও নথিগত কিছু জটিলতার কারণে বৈধ দলিল ও দখল থাকা সত্ত্বেও একজন ব্যক্তি তার জমি হারাতে পারেন, এমনকি তার দলিলও বাতিল হয়ে যেতে পারে।
আসুন, বিস্তারিত জেনে নিই সেই কারণগুলো এবং এ থেকে বাঁচার উপায়:
আত্মবিশ্বাসের বিপদ ও আইনি ফাঁদ
আইনজীবী বেলায়েত হোসেন জানান, অনেকেই সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই জমি ক্রয় করে দলিল করে ফেলেন। অথচ পরে দেখা যায়, দলিল বৈধ হওয়া সত্ত্বেও সেই জমির ওপর অন্য কারো অধিকার, সম্পত্তির অবিভক্ত অবস্থা অথবা জালিয়াতির কারণে দলিল বাতিল হয়ে যায় এবং ক্রেতাকে জমি হারাতে বাধ্য হতে হয়। তিনি তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন, যা উপেক্ষা করলে একজন জমির মালিক গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন:
১. অবিভক্ত উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রয় ও বণ্টন বিভ্রাট
যদি কোনো সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায় এবং তা 'অবিভক্ত' অবস্থায় থাকে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক ভাগ-বণ্টন হয়নি), তবে সেই জমি বিক্রয়ের আগে সমস্ত ওয়ারিশের সম্মতি এবং একটি আপোষ-বণ্টননামা (partition/apportionment deed) থাকা অত্যন্ত জরুরি। যদি এই বণ্টননামা না থাকে, তাহলে পরবর্তীতে অন্য কোনো ওয়ারিশ যখন তার ভাগের দাবি নিয়ে এগিয়ে আসবেন, তখন আপনার বৈধ দলিল এবং জমির দখল দুটোই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।
২. দলিলের দাগ/খতিয়ান/মৌজা সংক্রান্ত ভুল (মিসম্যাচ)
আপনার দলিলে উল্লিখিত দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর বা মৌজা নম্বরের সাথে যদি বাস্তব জমির অবস্থান বা দখলকৃত এলাকার মিল না থাকে, তাহলে এটি একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার দলিল বৈধ হওয়া সত্ত্বেও, যদি বিরোধী কোনো রেকর্ড বা প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়, তাহলে আদালত বা রেজিস্টার অফিসে এর বৈধতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। এর ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে আপনাকে জমি হারাতে হতে পারে। তাই, জমি কেনার আগে দলিলে উল্লিখিত তথ্য ভালোভাবে মিলিয়ে নেওয়া, সরেজমিনে যাচাই করা এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. জালিয়াতি বা অসৎ চক্রের মাধ্যমে বিক্রি (ফ্রড/জাল দলিল)
কিছু অসাধু চক্র জাল কাগজপত্র তৈরি করে বা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অন্যের নামে দলিল তৈরি করে নেয়, এমনকি নামজারি পর্যন্ত করিয়ে ফেলে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেটের যোগসাজশেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। পরবর্তীতে যখন প্রকৃত মালিক তার জমির দাবি নিয়ে হাজির হন, তখন নতুন ক্রেতা মারাত্মক আইনি জটিলতা ও হয়রানির শিকার হন এবং জমি হারাতে বাধ্য হন।
কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন? (প্রতিরোধী পরামর্শ)
জমির মালিকানা সুরক্ষিত রাখতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা অপরিহার্য:
ওয়ারিশান সনদ ও আপোষ-বণ্টননামা: যদি জমি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া হয়, তাহলে ওয়ারিশান সনদ এবং আপোষ-বণ্টননামা আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
দলিলের তথ্য যাচাই: দলিলের দাগ, খতিয়ান এবং মৌজা নম্বর স্থানীয় রেকর্ড বইয়ের সাথে মিলছে কিনা, তা জেলা রেজিস্ট্রি বা ভূমি অফিসে যাচাই করুন।
খাজনা পরিশোধের রশিদ: নিয়মিত খাজনা (দাখিলা) প্রদান করুন এবং রশিদ সংগ্রহে রাখুন। এটি জমির রেজিস্ট্রেশনের জন্য অপরিহার্য।
বিক্রেতার পরিচয় ও দলিলের চেইন: বিক্রেতার পরিচয় প্রমাণপত্র এবং পুরোনো দলিলের ধারাবাহিকতা (chain of transfer) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করুন। সন্দেহ হলে একজন অভিজ্ঞ ভূমি আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
ডিজিটাল রেকর্ড যাচাই: সম্ভাব্য জালিয়াতি বা সিন্ডিকেট নিয়ে সন্দেহ হলে দ্রুত ডিজিটাল রেকর্ড বা বিডিএস (BDS) ওয়েবসাইটে গিয়ে খতিয়ান অনলাইনে অনুসন্ধান করুন। প্রয়োজনে প্রশাসনিক তদন্তের জন্য আবেদন করুন।
রেকর্ড অটোমেশন ও অনলাইন সেভিং: সম্ভব হলে আপনার জমির রেকর্ড অটোমেশন করুন এবং অনলাইনে সুরক্ষিত রাখুন। এতে ভবিষ্যতে রেকর্ডহীনতা বা ভুলের সুযোগ কমে যাবে।
পেশাদার আইনি পরামর্শ: প্রতিটি কেসের সূক্ষ্ম বিবরণ ভিন্ন হতে পারে, তাই নামজারি বা রেজিস্ট্রেশনের আগেই সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য পেশাদার আইনি পরামর্শ নেওয়া উচিত। দ্রুত যাচাই না করলে ভবিষ্যতে সময়মতো সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে।
আইনজীবী এবং ভূমি বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন, জমি কেনার আগে সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং সমস্ত দিক ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করুন।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):
প্রশ্ন: বৈধ দলিল ও দখল থাকা সত্ত্বেও কি জমি হারানো সম্ভব?
উত্তর: হ্যাঁ, অবিভক্ত উত্তরাধিকার, দলিলের ভুল তথ্য বা জালিয়াতির কারণে বৈধ দলিল ও দখল থাকা সত্ত্বেও জমি হারানো সম্ভব।
প্রশ্ন: অবিভক্ত জমি বিক্রির ক্ষেত্রে কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
উত্তর: জমি বিক্রির আগে সমস্ত ওয়ারিশের সম্মতি এবং আপোষ-বণ্টননামা থাকা জরুরি।
প্রশ্ন: দলিলের তথ্যে ভুল থাকলে কী হতে পারে?
উত্তর: দলিলের দাগ, খতিয়ান বা মৌজা নম্বরে ভুল থাকলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে এবং জমি হারাতে হতে পারে।
প্রশ্ন: জালিয়াতি থেকে জমি বাঁচাতে কী করবেন?
উত্তর: বিক্রেতার পরিচয়, পুরোনো দলিলের চেইন ও ডিজিটাল রেকর্ড যাচাই করুন এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
তানভির ইসলাম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম হংকং: কখন, কোথায়, কবে ও কিভাবে দেখবেন লাইভ
- চলছে বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড নারী বিশ্বকাপ ম্যাচ: টস শেষ, লাইভ দেখবেন যেভাবে
- বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করলো ৩ কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা: বিএসইসি চেয়ারম্যানের ৭টি সাহসী পদক্ষেপ!
- শেয়ারবাজারের নীরব বিপ্লব: বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় বিএসইসি!
- কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড নারী বিশ্বকাপ ম্যাচ: লাইভ দেখবেন যেভাবে
- ৭ শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ঢল
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কারসাজির গন্ধ! তদন্তে বিএসইসি
- শেয়ারবাজারে নতুন উদ্দীপনা: 'বুল রান'-এর ঝলক, তবে সতর্কতার মিশ্রণ
- আজ বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড নারী বিশ্বকাপ ম্যাচ: লাইভ দেখার সহজ উপায়
- নতুন বেতন কাঠামোতে নতুন বড় চমক: গ্রেড কম, বেতন বেশি!
- আজকের খেলার সময়সূচি:বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান
- আজ বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ: কখন, কোথায় ও কিভাবেন দেখবেন লাইভ
- শেয়ারবাজারে 'স্বাভাবিক সংশোধন', কমেছে সূচক তবে বেড়েছে লেনদেন
- এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম কমল! ভোক্তাদের জন্য সুখবর, জানুন নতুন মূল্য